নগরীর আকবর শাহ থানাধীন বেলতলী ঘোনা এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্পের নামে পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণের দায়ে চসিক কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) রাতে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হাছান আহম্মদ বাদী হয়ে আকবরশাহ থানায় এ মামলা করেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন, চসিকের রাস্তা নির্মাণ উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাদাত মোহাম্মদ তৈয়ব, একই প্রকল্পের উপ প্রকল্প পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন, চসিকের সিনিয়র সাব এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (সিভিল) ওয়ালী আহমেদ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এবি-হক ব্রাদার্সের ওমর ফারুক, তার স্ত্রী মোসা. তাকিয়া বেগম, কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের সহযোগী মোহাম্মদ ইসমাইল।
এর আগে গত ৭ এপ্রিল বিকাল পাঁচটা ৪৫ মিনিটে পাহাড় কাটার সময় নগরীর আকবর শাহ থানার বেলতলী ঘোনা এলাকায় পাহাড় ধসে মজিবুর রহমান খোকা (৪৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর হয়। আহত হয় আরও তিনজন। প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে অননুমোদিতভাবে পাহাড় কেটে পরিবেশ ধ্বংস করে সেখানে রাস্তা নির্মাণ করছিল চসিক। ওইদিন পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মতিন, হাসান আহম্মদ ও পরিদর্শক মনির হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে তারা সেখানে খাড়া ও ঝুঁকিপূর্ণভাবে ৫০ হাজার ঘনফুট পাহাড় কর্তণ করার সত্যতা পান এবং কর্তণকৃত অংশে ইটের দেয়াল নির্মাণ কাজ চলতে দেখেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানতে পারেন, সেখানে পাহাড় কাটায় ১০ জন শ্রমিক কাজ করছিলেন। ঘটনার দিন ৫ জন শ্রমিক পাহাড় ধসে মাটি চাপা পড়ে। যাদেরকে স্থানীয়রা কোদাল দিয়ে মাটি সরিয়ে উদ্ধার করে৷ ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে তাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। অন্য ৫ জন নিরাপদ দূরত্বে থাকায় বেঁচে যান।
বেলতলী ঘোনা নামক ওই স্থানে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবি হক ব্রাদার্সকে রাস্তা নির্মাণের অনুমতি দেয় এবং এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ছিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর রাস্তা নির্মাণ করার উদ্দেশ্যে আনুমানিক ১৩ হাজার ৩০০ ঘনফুট পাহাড় কাটার দায়ে চসিক কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে শুনানির নোটিশ দেয়া হয়। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারিতে পাহাড় কাটা বন্ধ করার জন্য অগ্রণী ব্যাংক অফিসার্স কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিমিটেড লিখিত অভিযোগ দিলে আবারও শুনানিতে হাজির থাকার নোটিশ দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। গত ১০ জানুয়ারি ও ৩১ জানুয়ারি শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
কিন্তু ১০ জানুয়ারি শুনানিতে কাউন্সিলর জসিম, অগ্রণী ব্যাংক অফিসার্স কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির প্রতিনিধি শুনানিতে উপস্থিত থাকলেও চসিক ও সিডিএ’র কোনো কর্মকর্তাই শুনানিতে উপস্থিত হননি। ৩১ জানুয়ারি শুনানিতে কেবল অগ্রণী ব্যাংক অফিসার্স কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির প্রতিনিধি অংশ নিলেও অন্য পক্ষগুলো অনুপস্থিত ছিলেন।
একই পাহাড় কাটার অভিযোগে গত ১১ ফেব্রুয়ারি মো. শাহজাহান নামে একজন স্কেবেটর চালককে আটক করে ৭ দিনের কারাদণ্ড দেন কাট্টলীর সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ওমর ফারুক। সেসময় দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি স্বীকার করেছিলেন কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের নির্দেশে মো. ইসমাইল নামে তার এক সহযোগী তাকে দিয়ে পাহাড় কর্তন করাচ্ছিলেন এবং ৫০ হাজার ঘনফুট পাহাড় কর্তন করা হয়েছে।
এদিকে ৭ এপ্রিলের পাহাড় ধসে এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনার পর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদেরকেও মামলার অন্তর্ভূক্ত করা হবে বলে জানায় পরিবেশ অধিদপ্তর।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক বলেন, ‘ওই এলাকায় প্রকল্প পরিচালনাকালে কোনো টিলা বা পাহাড় কাটা হবে কিনা, কী পরিমাণ কাটা হবে, পাহাড় কাটা হলে ভূমিধস রোধকল্পে কোনো গাইড ওয়াল কিংবা রিটেনশন ওয়াল নির্মাণ করা হবে কিনা এ সম্পর্কে কোনো ধরনের তথ্য আমাদেরকে জানানো হয়নি এবং অনুমোদনও নেওয়া হয়নি। অননুমোদিতভাবে পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণ করায় বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর ধারা ৬ (খ) লংঘন করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে কারণে সেখানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে এবং এর মাধ্যমে পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থার মারাত্মক ক্ষতিসাধনসহ জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং বর্ষা মৌসুমে ভারি বর্ষণে পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থার মারাত্মক ক্ষতিসাধনসহ জানমালের ক্ষয়ক্ষতির আরও বেশি আশংকা করা হচ্ছে। যে কারণে সাতজনের বিরুদ্ধে আকবর শাহ থানায় মামলা করা হয়েছে।’