আমাদের প্রিয় নেত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা সব সময়ই বলেন, ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার কথা। তাঁর নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে ডিজিটাল বাংলার প্রতিচ্ছবি ছাপিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের ভিশন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, আমরাও তাঁর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র তথা একটি মানচিত্র ও ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলা, তিনি বুকের তাজা রক্ত দিয়ে তা আমাদের উপহার দিয়ে গিয়েছেন।
মাননীয় নেত্রী বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত স্বপ্নকে বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর এবং সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন বীরদর্পে কিন্তু ইদানিং কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা আমাদের হতাশাকে আরো বাড়িয়ে তুলছে। এইতো গত কিছুদিন আগে পবিত্র রমজান মাসে একের পর এক দেশের বিভিন্ন স্থানে আগুন লাগার ঘটনা আমরা দেখেছি, এতে হতাহতের চেয়েও ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। বিশেষ করে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বঙ্গবাজারের আগুন আমাদেরকে বেশী পিড়া দিয়েছে, নাড়া দিয়েছে জাতির বিবেককে, পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে দেখেছি বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা আগুনে পোড়া কাপড়-চোপড় নিয়ে কান্নাকাটি করছে, কেউবা পোড়া কাপড় সরানোতে ব্যস্ত। অনেকেই নিঃস্ব হয়ে গেছেন। ঈদ উপলক্ষে সারাদেশের পোশাকের সিংহভাগ এই বঙ্গবাজার থেকেই সরবরাহ করা হতো কিন্তু এবারের আগুন শুধু অনেককেই নয় সারাদেশের ক্ষুদ্র-মাঝারী-বড় ব্যবসায়ীদের হৃদয়ও ভেঙ্গে দিয়েছে সেই সাথে হতাশা বাড়িয়েছে মধ্যবিত্ত ও নিম্ম-মধ্যবিত্তদেরও, হাহাকার করা ব্যবসায়ীদের সাহায্য করার জন্য অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। বিশেষ করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাননীয় ঢাকা সিটির মেয়র, মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সহ অনেকেই সমবেদনা জানিয়েছেন, কেউ কেউ পুর্নবাসনের কথাও বলেছেন। আবার কেউ কেউ খোঁচা দিয়েছেন, বলেছেন এই স্থানটি পূর্বেই নোটিশ দিয়েছিল ভেঙ্গে ফেলার, আবার অনেকেই বিরোধীদলের দিকে ঈশারা করেছে। এখন পর্যন্ত এই ঘটনার কোন ক্লু পাওয়া যায় নাই, দায়সারা ভাব, মনে হচ্ছে এর দায়-দায়িত্ব কারো নেই। যাক সরকারের প্রতি অনুরোধ সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থদের পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করার।
একটি বিষয় ভালো লেগেছে আগুন লাগার খবর শুনে আমাদের সেলিব্রেটিরাও এগিয়ে এসেছেন মানবতার দূত হয়ে, কেউ পোড়া ছাই কিনেছে কেউবা পোড়া জিন্স প্যান্ট কিনেছে। তারা চেষ্টা করেছে তাদের অবস্থান থেকে কিছু করার, সাধুবাদ তাদের জন্য। আরেকটি বিষয় হলো রাউজানের এমপি মহোদয়ের ছেলে ফারাজ করিম চৌধুরী, স্যালুট হিম, লাইভে এসে পোড়া কাপড়-চোপড় দেখিয়েছেন সারাদেশের মানুষকে। মানুষ আবেগ আপ্লুত হয়েছেন এবং অনেকেই নগদ সাহায্য পাঠিয়েছেন, তিনি ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের মাঝে বন্টন করেছেন, আবার পোড়া-ভেজা কাপড় কিনে নিজের বাড়ীর ছাদে শুকিয়েছেন।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে দুর্বল বাজার ব্যবস্থাপনা ও সঠিক মনিটরিং এর অভাব, যার দায় পড়েছে ফল-মুলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের উপর। তার উপর কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ফরমালিন নামক বিষ মিশিয়ে কাচা কলা উপরে সবুজ কিন্তু ভিতরে পাকা আবার কোনটা শক্ত। তরমুজ কাটলে লাল কিন্তু ভিতরে সাদা মিষ্টি নাই তার উপর আপেল-মাল্টাসহ সবকিছুরই দাম চড়া। চালের দাম কমানো যাচ্ছে না সর্বনিম্ম ৫৫/৬০, তেল, ডাল, চিনিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পন্য সবকিছুই লাগাম ছাড়া, কিছু দিন আগে তো ব্রয়লার মুরগি ২৪০ টাকা ছাড়িয়েছে। গরু-ছাগলের মাংস মধ্যবিত্ত/নিম্ম মধ্যবিত্তদের সাধ্যের বাইরে চলে গেছে।
অন্যদিকে কিছু নামী দামী রেষ্টুরেন্টে কুকুর-বিড়ালের মাংস কাচ্চিতে চালাচ্ছে, যেটা আমরা ইউটিউব, ফেসবুকসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় দেখেছি। সর্বশেষ সুলতান ডাইন নামক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ আমাদের ভোক্তা অধিকার টিম প্রমান করতে পারেনি। খামাকা মানুষকে ব্রিভান্ত করা আর বেচারা প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুন্ন করা। এই নিউজ শোনার পর অনেকেই তেহারী-বিরিয়ানী-কাচ্ছি-গরু-খাসির মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়ে সবজি খাওয়া শুরু করে। আর এই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়িরা শাক-সবজি-মাছের উপর ফরমালিন দিয়ে গলা কাটছে। পাঠক’ একটু চিন্তুা করুন; এগুলো কেন হচ্ছে? সরকার বাজার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সম্পূর্নরুপে উদাসিন, না কি বাজার মনিটরিং এ সেচ্ছাচারিতা, এর সাথে জড়িত কারা? বানিজ্য মন্ত্রণালয় সর্ম্পূরূপে ব্যর্থ। অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ অধীনস্থ টম টু বটম পর্যন্ত পরিবর্তন দরকার। কেননা আমাদের জননেত্রীর ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়িত হবে না যদি সাধারণ মানুষ তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি তাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে না পারে। এ ব্যাপারে জননেত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
গত এপ্রিল/২০২৩ এ জাতীয় ক্রীড়া সংস্থায় লম্বা লাইন নিয়ে নারী-পুরুষ দাড়িয়ে আছে। দু-এক জনের সাথে আলাপ করে জানতে পারলাম ভিজিএফ কার্ডধারীরা অল্প দামে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কিনছে কিন্তু দেখা গেল বেশীরভাগ লোকই তেল-ডাল নিজেরা ব্যবহার করছে না এরা বিভিন্ন ব্যক্তি ও দোকানীর কাছে বিক্রি করছে। প্রকৃত কার্ডধারী কেউ নাই বেশীরভাগই নামসর্বস্ত্র, নেতা-পাতি নেতারা ইচ্ছামত কার্ড দিয়ে স্বস্তি। এখানেও মনিটরিং এর অভাব, যা হচ্ছে নেতাদের খেয়াল-খুশি-মর্জি মত হচ্ছে। যারা প্রকৃত অভাবী তারা তো পাচ্ছে না! তাহলে সরকারের কি লাভ হলো? এত টাকা ভর্তুকি দিয়ে? আমি দেখেছি সরকার দেশের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাগবে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে এবং বাস্তবায়নের চেস্টা করছে কিন্তু সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড থেকে মন্ত্রী পর্যন্ত দুষ্টু-অসাধু ব্যক্তিদের কারনে সরকারের সাফল্য ম্লান হচ্ছে, এদেরকে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় এনে প্রকৃত দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ত্যাগী নেতাদের মুল্যায়ন ও দায়িত্ব দিতে পারলে সোনার বাংলা থেকে ঘুষ-দুর্নীতি-লুটপাট-চাঁদাবাজি বন্ধ হয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত হবে।
আরেকটি ব্যতিক্রমি উদ্যোগ দেখলাম এবার ঈদ-উল-ফিতর এর ট্রেন যাত্রায়। প্লাটফর্মে কোন টিকিট ছিল না সব টিকিট ছিল অনলাইন এ। খুবই ভালো উদ্যোগ, ডিজিটাল বাংলার প্রতিচ্ছবি সেই সাথে ভোগান্তিও কম ছিল না, অনেকেই একসাথে টিকিট কাটতে গিয়ে সার্ভার ডাউন হয়ে গিয়েছিল। অনেকেই ঘন্টার পর ঘন্টা লগইন করেও টিকিট পায় নাই। পরে জেনেছি ঈদ যাত্রার অনেক সিট খালি ছিল। আসলে রেলমন্ত্রণালয় এতো বড় একটা উদ্যোগ নিল অযোগ্য কোম্পানীকে দায়িত্ব দিয়ে। এখানেও সঠিক মনিটরিং নাই, থাকলে এ অবস্থা হতো না। মন্ত্রী মহোদয় ঘোষণা দিয়েই শেষ আর খবর নিলেন না কে টিকেট পেল কে পেল না ! এভাবে তো হবে না, শুনছি ও গত সপ্তাহে দেখেছি পদ্মায় রেল যাচ্ছে, গুড নিউজ। কিন্তু আমার মতে এই মন্ত্রণালয়ে আরো দক্ষ-অভিজ্ঞ মন্ত্রী দরকার। সামনে আমরা ট্রান্স এশিয়ান রেলে যোগ দিব, বুলেট ট্রেন আসবে, এসব সামাল দিতে দক্ষ মন্ত্রী, লোকবল প্রয়োজন। আশাকরি বিষয়টি দেখবেন।
অন্যদিকে বাস মালিকরাও ছিল বরাবরের মতোই উদাসিন। এবারও তারা ৫০/১০০ টাকা দাম বাড়িয়েছে টিকেট প্রতি। ঢাকা-ফেনী রুটের জনপ্রিয় ”স্টার লাইন’ পরিবহন কর্তৃপক্ষও তাদের নিয়মিত ভাড়া ৩৮০/- টাকার স্থলে নন-এসির ভাড়া ৪৩০/- টাকা নির্ধারন করে। ফেনীবাসীর অন্য কোন সার্ভিস না থাকায় ও স্টার লাইন পরিবহনের যাত্রীসেবা ভালোর কারনে মানুষ এক প্রকার তাদের নিকট জিম্মি। অন্য লাইনেও একই অবস্থা। আসলে আমরা বাস মালিকদের উপর জিম্মি হয়ে গেছি, ওরা আমাদের চামড়া তুলছে আর আমরা পিঠ দিয়ে শান্তি! গুটি কয়েক বাস মালিকদের জন্য বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা, মাননীয় প্রধানন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলা কলংকিত হতে পারে না। এদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে, আম-জনতাকে যাত্রাপথে স্বস্তি দিতে হবে তবেই তারা প্রিয় নেত্রী আপনার জন্য দোয়া করবে যাতে আগামী নির্বাচনেও আমি বিপুল ভোটে জয়লাভ করতে পারেন।
সুদিনের অপেক্ষায়। পরিশেষে বলবো- উন্নয়ন মানেই শেখ হাসিনা, নেতৃত্ব-ব্যক্তিত্ব মানেই শেখ হাসিনা, নেত্রী মানেই ওয়ান এন্ড অনলি শেখ হাসিনা। এগিয়ে যাক বাংলাদেশ শেখ হাসিনার আলোয়।