চট্টগ্রামে সুপেয় পানির তীব্র সংকট , ক্যাবের ক্ষোভ

জরুরিভাবে চট্টগ্রাম নগরে সুপেয় পানির সরবরাহ নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগ ও নগর কমিটি।
সুপেয় পানির ভয়াবহ সংকটে ক্ষোভ প্রকাশ করে রবিবার (৭ মে) এক বিবৃতিতে ক্যাবের নেতারা এসব দাবি জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, প্রচণ্ড তাপদাহে দেশ পুড়ে যাচ্ছে। এ সময় পানির চাহিদা যখন বেড়ে গেল তখন চট্টগ্রাম ওয়াসায় উৎপাদন কমে যাওয়ায় তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। নগরের প্রায় অর্ধেক এলাকায় চট্টগ্রাম ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতে মাত্রাতিরিক্ত লবণ পাওয়া যাচ্ছে। ওয়াসার দাবি, কাপ্তাই হ্রদে পানির স্তর অনেক নেমে গেছে। এ কারণে হ্রদের পানি ছাড়া হচ্ছে না। এর প্রভাবে হালদার পানিতে লবণাক্ততা বেড়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কর্ণফুলী নদীতে শেওলা জমা, কাপ্তাই হ্রদে পানি কমে যাওয়া, কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে সমুদ্রের পানি প্রবেশের কারণে ওয়াসার পানির উৎপাদন কমে গেছে। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এ সংকটের সমাধান হবে না। এছাড়া হালদার পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় শেখ রাসেল ও মোহরা পানি শোধনাগার থেকে চট্টগ্রাম ওয়াসার উৎপাদন অস্বাভাবিকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এমতাবস্থায় একদিকে পানির জন্য হাহাকার, অন্যদিকে মানুষ সুপেয় পানি পাচ্ছে না।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, সুপেয় পানির জন্য মানুষকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে বেসরকারি পানি উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে কিনে পান করতে হচ্ছে। দৈনন্দিন কাজে প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি না পাওয়ায় মানুষের ভোগান্তির মাত্রা দিনদিন বেড়েই যাচ্ছে।

ক্ষোভ প্রকাশ করে ক্যাব নেতারা বলেন, শুরু থেকেই ওয়াসা লবণাক্ততার বিষয়টি গোপন করে এসেছে। শুষ্ক মৌসুমে চট্টগ্রামের ওয়াসার পানিতে লবণের বিষয়টি আরো দু-এক বছর আগেই আঁচ করা গিয়েছিল। কিন্তু চট্টগ্রাম ওয়াসা সতর্ক রয়েছে। যার খেসারত এখন জনগণকে দিতে হচ্ছে। লবণাক্ততা ও পানির সংকটের কারণে নগরের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ ভোগান্তিতে আছে বললেও প্রকৃত অর্থে এই সংকটে অর্ধেকের বেশি নগরবাসী কষ্ট পাচ্ছে।

ক্যাব নেতারা আরও বলেন, নগরবাসী বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে ওয়াসার লবণাক্ত পানি নিয়ে ভোগান্তিতে আছেন। পানি পরিশোধন করলেও লবণ যাচ্ছে না। অনেক জায়গায় নালার দুর্গন্ধযুক্ত, ময়লা ও কালো পানি পাচ্ছেন নগরবাসী। কেউ দূরদূরান্তের পুকুর ও গভীর নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহ করে আনছেন। কেউ পানি কিনে রান্না ও খাওয়ার কাজ সারছেন। গোসলসহ অন্যান্য কাজ করতে পারছেন না। ওয়াসার বেশিরভাগ লাইন পুরোনো হওয়ার কারণে এমনিতেই সংকটে থাকতে হয় গ্রাহকদের।

লাইনে লিকেজ বা ছিদ্রের কারণে পানি নষ্ট হয় উল্লেখ করে ক্যাব নেতারা বলেন, এখন সংকট আরও প্রকট হয়েছে। সেখানে ওয়াসা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েই দায় সেরেছে। কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। বরং নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ ও পানির মূল্য বাড়াতে নতুন পরিকল্পনায় ব্যস্ত। ওয়াসার পরিচালনা পর্ষদ ও সরকারের পক্ষে তদারকি মন্ত্রণালয়ের ভূমিকাও রহস্যজনক। সংকটে কারও তৎপরতা দৃশ্যমান না হওয়ায় হতাশাজনক।

ক্যাব নেতারা বলেন, এমন নাজুক পানি সরবরাহ ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে, যেখানে নগরবাসী চরমভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে। মানুষ ওয়াসার পানি সরবরাহ নিয়ে চরমভাবে ভুক্তভোগী হচ্ছে। নিরাপদ পানি সংগ্রহে বাড়তি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। এমনিতে বিভিন্ন এলাকায় পানির সরবরাহ কমে গেছে। যেটুকু আসছে, তা-ও লবণের কারণে মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। এ পানি পান করে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।

নেতারা আরও বলেন, বছর ঘুরতে না ঘুরতেই পানির দাম বাড়ে। উন্নয়ন প্রকল্পেও হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। কিন্তু নগরবাসীকে নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্য বৃষ্টির অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর কী হতে পারে। কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই লবণাক্ততা পরিশোধনে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি থেকে রেহাই পেতো।

বিবৃতিতে সই করেন ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, সহ-সভাপতি সাংবাদিক এম নাসিরুল হক, মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবদুল মান্নান।