আমাদের জাতীয় মসজিদ রাজধানীর পল্টন ও গুলিস্তানের কাছে অবস্থিত। জানা যায় ১৯৬৮ সালে এই মসজিদটির নির্মান কাজ শুরু হয়। এর স্থাপত্যশৈলী অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন। তৎকারীন পাকিস্তানের বিশিস্ট শিল্পতি লতিফ বাওয়ানি ও তার ভাতিজা ইয়াহিয়া বাওয়ানির উদ্যোগে এই মসজিদ নির্মানের পদক্ষেপ গৃহীত হয় এবং মসজিদটি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবার পর শুক্রবার ২৫ জানুয়ারী ১৯৬৩ সালে প্রথমবারের মত এখানে নামাজ পড়া হয়। মসজিদে একসাথে ৩০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে, ফলে ধারণক্ষমতার দিক দিয়ে এটি
বিশ্বের ১০ম বৃহত্তম মসজিদ। বর্তমানে মসজিদটি 8তলা বিশিষ্ট এবং ৪০ হাজারের বেশী মুসল্লী নামাজ আদায় করতে পারে। জুমার নামাজ ছাড়াও পবিত্র রমজান মাসে তারাবীর নামাজসহ, বিভিন্ন ইসলামিক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। নিচ তলায় বিপনী বিতান রয়েছে। এসব কিছু নিয়ন্ত্রণ পরিচালনা ও সারাদেশ ইসলামিক বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন রয়েছে। বর্তমান ইসলামিক ফাউন্ডেশন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ধোধন করেন।এটি সরকারী একটি প্রতিষ্ঠান। (সুত্র : উইকিপিডিয়া)।
এই মসজিদের দৃষ্টিনন্দন কার্যক্রম যেরকম আমাদেরসহ নানাদেশের পর্যটকদের আকৃষ্ট করে তদ্রুপ ততটুকুই ব্যতিত হই, যখন দেখি অনিয়ম, ভবঘুরদের আশ্রয়স্হল আর নানারকমের মানুষের ঘুমের আশ্রয়স্থল দেখে। বিস্মিত হই যখন দেখি ভবঘুরেরা নামাজের সময় ছাড়াও ফ্যান চালিয়ে ঘুমাচ্ছে, এদের বেশীরভাগই নেশাগ্রস্থ, কারোই ঠিকানা নাই। এরা জাতীয় সম্পদের অপচয় ও পরিবেশ বিনষ্ট করছে, এদের কোন ওযু নাই, গোসল নাই, পায়খানা-প্রশাব করে আবার মসজিদে ঘুমায়। ভেতর-বাহিরে একই অবস্থা। এগুলো কি দেখার কেউ নাই? আপনি লক্ষ্য করবেন মসজিদের বাইরে ভিতরে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো, তাহলে এগুলো কি জন্য লাগানো? এদের দেখা-দেখি সাধারন মানুষও নামাজ শেষ করে বা অন্যসময়েও আড্ডা দেয়, কেউবা গোল হয়ে বসে মিটিং করছে! কেউবা খাওয়া-ধাওয়া করছে তার উপর জুতা চুরির ব্যাপার তো আছেই। এগুলো রোধ করা যাচ্চে না। আরেকটি দিক হচ্ছে অযুখানা ও টয়লেট। পূর্বদিকে টয়লেট ও অযুখানা আশেপাশে কিছু দোকানপাট-মার্কেট রয়েছে। মার্কেটের লোকদের জন্য ভিআইপি টয়লেট, আর সাধারন পাবলিকের জন্য গনহারে টয়লেট ও অযুর ব্যবস্থা। আপনি দেখতে পাবেন-এটা কি অযুখানা নাকি মার্কেটের লোকদের কিচেন। মার্কেটের ছোট-বড় ছেলে ও মহিলারা প্লেট-জগসহ সবকিছু ধোয়ার কাজে ব্যস্ত। পাশে মুসল্লীরা দাড়িয়ে থাকে কখন শেষ হবে তাদের কাজ, কিছু বললেই রেগে যায়। তারউপর ফুটপাতের দোকানীরা বিনামূল্যে জারে ভরে পানি নিয়ে যাচ্ছে। আর টয়লেটের তো অত্যন্ত বাজে অবস্থা, যাকে বলে গণ-শৌচাগার, ভবঘুরে-গাছাখোর-হিরোইনছি-ডান্ডিখোর পুরুষ-মহিলা-ছেলে-বুইড়া সবাই এইসব টয়লেট ব্যবহার করে। পরিবেশ দুষিত করছে। নামেই অযুখানা ও টয়লেট কিন্তু আসল কাজ সারছে ওরা। টয়লেটগুলো বেশীরভাগই ময়লার ভরা কোন কোন টয়লেটের ভিতর বিবিন্ন ধরনের বোতল পাওয়া যায়। নেশাখোররা নেশা করে বাথরুমে। বেশীরভাগ টয়লেটে তালা মারা থাকে। এগুলো কি দেখার কেউ নাই। এই সব ভবঘেুরে-গাছাখোরদের হাত থেকে দেশের মূল্যবান সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ অতিব জরুরী নতুবা টয়লেটে ও অযুখান অন্যত্র সরানো দরকার বলে একজন সাধারন মুসল্লী হিসেবে মনে করছি।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে ইফতার। প্রতিবারই দেখেছি বায়তুল মোকারমে রমজান মাসে ইফতারির কার্যক্রম। সারাদেশের অফিসগামী ও ব্যস্ত লোকজন যারা বাসায় গিয়ে ইফতার করতে পারবে না এবং গরীব-অসহায়দের কথা চিন্তা করে এই আয়োজন ছিল প্রশংসনীয়। মাঝখানে করোনাকালীন সময় বাদ দিয়ে অন্যসময় মানুষের অনেক উপকারে লেগেছে কিন্তু এবার বসুন্ধরা গ্রুপকে ইফতারীর কাজটি দেওয়া একদমই উচিত হয় নাই। ইসলামী ফাউন্ডেশনের ফান্ড কি কমে গেছে? এত শত শত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিচ্ছে, দামী গাড়ী দিচ্ছে অথচ ইফতারের বেলায় এসে কিপ্টামী? নাকি উদাসিনতা? মানছি বসুন্ধরা গ্রুপ বড় একটি শিল্পগোষ্টি, দেশে শিল্পায়নে তাদের অবদান আছে, তাই বলে এখোনে কেন? তাদের জন্য এতই শখ হয় মানুষকে ফ্রি ইফতার করাবে তাহলে তাদের এলাকায় সবচেয়ে বড় মসজিদে করত, এখানে করার কোন মানে দেখছি না। আশা করছি আগামীতে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে। এ ব্যাপারে সংশ্লিস্ট কতৃৃপক্ষের দৃস্টি আকর্সন করছি।
২০০৮ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বিপুল ভোটে জয়লাভের পর জাতীয় মসজিদটি সংস্কার ও সম্প্রসারনের উদ্যোগ নেয় সৌদি অর্থায়নে। মসজিদের আরো অনেক কাজ বাকী। নিচতলায় একটি ডায়গনিস্টক সেন্টার হচ্চে, এটা ভালো উদ্যোগ, গরীব-ধনী সবাই চিকিৎসা নিতে পারবে। সরকার সারাদেশে মডেল মসজিদ নির্মানের উদ্যোগ নিয়েছে, সৌদি সরকার অর্থায়ন থেকে বিরত থাকলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর ডিজিটাল বাংলার প্রতিচ্ছবি বাস্তবায়নে শিশু-থেকে বয়স্কদের আধুনিক ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিতকরনের লক্ষ্যে প্রকল্পটির কাজ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নে অঙ্গীকারাবদ্দ হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন্। কিছুদিন আগে পবিত্র রমজান মাসে 50টিরও বেশী মডেল মসজিদ এর উদ্ধোধন করেন। বাকী কাজগুলো এগিয়ে যাচ্ছে। সরকার এদেশে ইসলামের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখতে বদ্ধ পরিকর। সারাদেশে ইমামদেরকে ভাতা প্রদানসহ ইসলামী ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সরকারী-বেসারকারীভাবে বিভিন্ন ধরনের ইসলামিক অনুষ্ঠান প্রচার করে যাচ্ছে। ভাবতে ভালো যখন শুনতে পাই আমাদের দেশের একজন কুরআনের হাফেজ তাকরীম ৩৮তম ইরান আর্ন্তজাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগীতায় প্রথম স্থান অর্জন করে। এছাড়াও ২০২২ সালে সৌদি আরবের মক্কায় অনুষ্ঠিত ৪২ তম বাদশাহ আব্দুল আজিজ আর্ন্তজাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগীতায় ১১১টি দেশের ১৩৩ জন হাফেজের মধ্যে তাকরিক তৃতীয় স্থান অর্জন করে। ২০২৩ সালেও দুবাই আর্ন্তজাতিক কুরআন প্রতিযোগীতার ২৬ তম আসরে প্রথম স্থান অর্জন করেন। (সুত্র ঃ উইকিপিডিয়া)। এই সাফল্য আমাদেরকে প্রমান করে আমরা ইসলাম বিদ্দুষি নই।
পরিশেষে বলতে চাই বায়তুল মোকরম নিয়ে চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম শেষ হলে আরো দৃষ্টিনন্দন হবে এবং মুসল্লীগন আরো ভালভাবে ধর্ম-কর্ম পালন করতে পারবে এবং সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে।