চট্টগ্রামের বাঁশখালীর দক্ষিণ রত্মপুরের বাহারছড়া এলাকায় জলকদর খালের জায়গা দখল করে অবৈধভাবে এখনো চলছে লাইসেন্সবিহীন গাজী ব্রিকস। এতে খালটি ভরাটের পাশাপাশি ইটভাটার দূষণে মাছসহ জীববৈচিত্র নষ্ট হচ্ছে। সম্প্রতি ব্রিকফিল্ড মালিক খালটি ভরাট করছে বলে পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিবেদন দিয়েছে। উচ্চ আদালত নির্দেশ দিয়েছে দেশের সকল লাইসেন্সবিহীন ইটভাটা উচ্ছেদের জন্য। স্থানীয় সামাজিক সংগঠন ও এলাকাবাসী আদালতের নির্দেশের আলোকে স্থানিয় প্রশাসন,পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলাপ্রশাসক বরাবরে লিখিত ও মৌখিকভাবে উচ্ছেদের আবেদন করলেও কর্তৃপক্ষ নির্বিকার। উচ্চ আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় আন্দোলনরত সামাজিক সংগঠনের সদস্য ও এলাকাবাসী ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশ থাকার পরও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা বলে ‘জলকদর খাল বাঁচাও’ এবং রত্নপুর সমাজ উন্নয়ন পরিষদ সংগঠনের অভিযোগ।
জলকদর খালটি বাঁশখালীর পানি প্রবাহের একমাত্র মাধ্যম ও প্রধান খাল জনকদর খাল। এটি শঙ্খ নদী হয়ে খান খানাবাদের অভ্যন্তরে বাহারছড়া, কাথারিয়া, সরল, গন্ডামারা, শীলকূপ, ছনুয়া, শেখেরখীল মধ্যবর্তী স্থান হয়ে আবারও দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে মিলেছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, দীর্ঘদিন ধরে জলকদরের দুই পাড় অবৈধ দখলদারদের চাপে এবং সংস্কার না হওয়ায় খালটি সরু হয়ে পড়েছে। দখল ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে লবণ সরবরাহ করতে গিয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকাগুলো ভোগান্তির মুখে পড়ছে। এছাড়া, পাহাড়ি ছড়াগুলোর ঢল অপ্রশস্ত খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশন হতে না পেরে বর্ষায় বাঁশখালীতে বন্যা দেখা দেয়।
জলকদর খালের নৌকার মাঝি আবুল বশর বলেন, অবৈধ দখলের কারণে খালটি ভরাট হয়ে নাব্যতা হারাচ্ছে। ফলে অনেক জায়গায় নৌ চলাচলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছি।
খাল দখল প্রতিরোধে অনলাইন ভিত্তিক সংগঠন ’জলকদর বাঁচাও’ আন্দোলনের নেতৃবৃন্দরা জানান, জলকদর খালের বেশকিছু স্থানে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এরমধ্যে বাহারছড়া এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া গাজী ব্রিকস নামক ইটভাটা গড়ে তুলেছে আজিজুল হক ও আমিনুল হক দুই সহোদর। এলাকার জন সাধারণ লাইসেন্সবিহিন এ ব্রীকফিল্ড উচ্ছেদের জন্য আন্দোলন করছে। পরিবেশ অধিদপ্তর ২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বর এনফোর্সমেন্ট মামলা নং-৭৪৮/২০২০/২৫১৬ দায়ের করেন। কিন্তু মালিক পক্ষ দেশের আইন কানুন ও আদালতের নির্দেশের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ব্রিকফিল্ড চালু রাখেন।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম পরিচালকের কাছে এলাকাবাসীরা বেশকয়েকটি লিখিত অভিযোগ দেন । এতে উল্লেখ করা হয়, গাজী ব্রিকফিল্ডের নামে লাইসেন্স কিংবা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। ওই ইটভাটা ও তৎ জমির উপর ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত (দক্ষিণ) নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। তারপরও অবৈধ ইটভাটাটি ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে।
স্থানীয় জেলে সম্প্রদায়ের একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ইটভাটার ১৫০ মিটারের মধ্যে জেলে সম্প্রদায়ের ১০০ টি পরিবার রয়েছে। রয়েছে একটি বাজার এবং ৫০০ মিটারের মধ্যে একটি উচ্চ বিদ্যালয়, একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়৷ মসজিদ ও মন্দির রয়েছে। এ জায়গায় ইটভাটা হওয়াতে এলাকায় দূষণ বেড়েছে। মানুষ শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে ভোগছে। কৃষি চাষে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। ব্রিকফিল্ডে ব্যবহারের জন্য কৃষি জমির টপ সয়েন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।ব্রীকফিল্ডটিতে জ্বালানী হিসেবে আইনবহির্ভূতভাবে কাঠ পুড়াচ্ছে।
এদিকে জলকদর খালের অবৈধ দখল ও ভরাট বন্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিচ বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) জনস্বার্থে রিট পিটিশন দায়ের করলে শুনানি শেষে আদালত এই নির্দেশ দেয়।
রায় প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ বলেন, শুনানি শেষে হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ ৪ সপ্তাহের রুল জারি করে জলকদর খাল ও জায়গা দখল করে ভরাট ও ভবন নির্মাণ বন্ধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বে-আইনি ঘোষণা করা হবে না এবং খালের অভ্যন্তরে থাকা সব অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদের কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না তা বিবাদীদের জানাতে বলেছেন আদালত।
এব্যাপারে গাজী ব্রিকস এর মালিক আজিজুল হক বলেন, আমার ইটভাটার কারণে জলকদর খালের কোন প্রভাব পড়ছে না। একটি মহল হাইকোর্ট থেকে ইটভাটাসহ স্থাপনা উচ্ছেদের আদেশ নেন। পরে আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তা স্টে করে দেন।