আবাসিকে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব তিতাসের

আবাসিকে গ্যাসে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে দেশের সব চেয়ে বড় গ্যাস বিতরণী সংস্থা তিতাস। চলমান গ্যাস সংকটের মধ্যে এক চুলার ক্ষেত্রে ৩৯০ টাকা ও দুই চুলার ক্ষেত্রে ৫১৩ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব সংস্থাটি। যদি তাদের প্রস্তাবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটর কমিশন (বিইআরসি) সায় দেয় তাহলে দুই চুলার মাসিক বিল হবে ১ হাজার ৫৯২ টাকা। আর এক চুলায় বিল হবে এক হাজার ৩৮০ টাকা।

গত ২ মে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠিয়েছে তিতাস। প্রস্তাবে আবাসিকে মিটারবিহীন এক এবং দুই চুলার গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ৩৯ থেকে ৪৭ শতাংশ গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়।

তিতাসের দাবি, আবাসিক গ্রাহকরা যে পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার করে তার চেয়ে কম টাকার বিল দিচ্ছে। এজন্য বিল বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে বিইআরসিকে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি।

বর্তমানে এক চুলার ক্ষেত্রে একজন গ্রাহক প্রতি মাসে সর্বোচ্চ ৫৫ ঘনমিটার এবং দ্বিমুখী চুলার ক্ষেত্রে ৬০ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার করেন এমন বিবেচনায় কমিশন সর্বশেষ গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ করেছে। প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১৮ টাকা হিসাবে বর্তমানে মিটারবিহীন আবাসিক গ্রাহকের মাসিক বিল যথাক্রমে ৯৯০ ও ১০৮০ টাকা দিতে হয়। বর্তমানে মিটারবিহীন গ্রাহকের সংখ্যা ২৫ লাখ ২৫ হাজার।

বিইআরসি বলছে, বিতরণ সংস্থা যে কোনো সময় তাদের দাবি জানাতে পারে। কমিশন পরীক্ষা করেই এ বিষয়ে নিয়ম অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবে।

বিইআরসিকে দেয়া এক চিঠিতে তিতাস অভিযোগ করেছে, বিইআরসি গত বছর সেপ্টেম্বরে গ্যাসের দাম নির্ধারণের সময় আবাসিক গ্রাহকদের ব্যবহার কম নির্ধারণ করায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তারা।

সবশেষ ২০২২ সালের ৫ জুন গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। সেই দাম অনুযায়ী, বর্তমানে রান্নার গ্যাসের জন্য দুই চুলার মাসিক বিল ১০৮০ টাকা এবং এক চুলার মাসিক বিল ৯৯০ টাকা করা হয়েছে। আগে যা ছিল যথাক্রমে ৯৭৫ ও ৯২৫ টাকা।

এরপর চলতি বছর ১৮ জানুয়ারি সরকারের নির্বাহী আদেশে শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বাণিজ্যিক খাতে আবার গ্যাসের দাম বাড়ানো হলেও বাসাবাড়িতে বাড়ানো হয়নি। তখন প্রতি ইউনিটে সর্বোচ্চ ১৯ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

তিতাস দাবি করেছে, আবাসিক গ্রাহকরা গড়ে একটি চুলায় ৯৭ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার করেন। যুক্তি হিসেবে চিঠিতে তিতাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত অক্টবর থেকে মার্চ পর্যন্ত মোট ৬ মাসের গ্যাস ব্যবহারের পর্যালোচনা করে তারা এই হিসাব দাঁড় করিয়েছে।

তিতাস বলছে, অক্টোবরে ৫২ হাজার ২১১ চুলায় গ্যাস ব্যবহার হয়েছে ৫০ লাখ ৪৬ হাজার ৪৩৮ ঘনমিটার। এতে গড়ে একটি চুলায় গ্যাস ব্যবহার হয়েছে ৯৭ ঘনমিটার।

নভেম্বরে ৫৩ হাজার ৭৫৭ চুলার হিসাব করে বলা হচ্ছে, গড় ব্যবহার ছিল ৯৪ ঘনমিটার। ডিসেম্বরে ৫৩ হাজার ৪০০ চুলার হিসাব পর্যালোচনা করে তারা বলছে ওই মাসে একটি চুলা ৯৬ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার করেছে। জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি এবং মার্চে যথাক্রমে একটি চুলা গড়ে ১০৩, ১০৫ এবং ৮৬ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার করছে।

কিন্তু বিইআরসি গত সেপ্টেম্বরে দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে এক চুলায় ৫৫ ঘনমিটার এবং দুই চুলায় ৬০ ঘনমিটার ব্যবহার ধরে দাম নির্ধারণ করে দেয়। এজন্য তিতাস বলছে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে মিটারবিহীন গ্রাহককের ব্যবহার এক চুলায় ৭৬ দশমিক ৬৫ ঘনমিটার এবং ৮৮ দশমিক ৪৪ ঘনমিটার পুনর্নিধারণ করতে অনুরোধ করেছে।

তবে তিতাসের মিটারবিহীন গ্যাসের চুলা ছাড়াও মিটারযুক্ত গ্যাসের চুলা রয়েছে। এর একটি চুলায় প্রতিমাসে কী পরিমাণ বিল আসে সেই হিসাব তিতাসের কাছেই রয়েছে। মিটারযুক্ত গ্রাহকরা কী পরিমাণ বিল দিচ্ছে তার কোনো পরিসংখ্যান এই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়নি।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশীদ মোল্লাহ বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয়টি তিতাস গ্যাসের কাজ নয়, আমরা শুধু গ্যাস বিতরণ করি আর ১৩ পয়সা হারে মার্জিন পাই। যারা প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করে না তারা আনলিমিটেড গ্যাস ব্যবহার করে, বেশি পরিমাণ গ্যাস ইউজ করে। বিইআরসি প্রি পেইড মিটারে গ্যাসের ব্যবহার বিবেচনায় নিয়ে সিঙ্গেল বার্নারের জন্য ৫৫ ঘনমিটার আর ডাবল বার্নারের জন্য ৬০ ঘনমিটার বরাদ্দ করেছে। মানুষের জন্য প্রি-পেইড মিটার থাকে তখন তারা কনসাসলি অনেক কম গ্যাস ব্যবহার করে। মিটার যখন থাকে না তখন আনলিমিটেড গ্যাস ব্যবহার করে। আমরা কমিশনকে এটা বলার চেষ্টা করেছি।