দেশ প্রচন্ডগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু সমাজ প্রগতির পথে ধাবিত হবার পাশাপাশি কিছু কিছু সামাজিক ব্যাঁধির প্রচন্ডরকমের সামাজিক সংক্রমন ও বিস্তার ঘটেছে। যার কারনে অনলাইনে প্রতারনা যেমন বেড়েছে, তেমনি মানুষের পকেট কেটে রাতারাতি বড় লোক হবার সংখ্যাও বহুগুন বেড়েছে। একটা সময় খাদ্যে ভেজাল, মানহীন খাবার বিক্রি হতো, এখন জীবনরক্ষাকারী ওষুধ থেকে শুরু করে সব ধরণের খাদ্য-পণ্যও ভেজালের সংখ্যা বাড়ছে। খাদ্য-পণ্যের দাম বাড়লে একটা সময় রাজনৈতিক দলগুলো এগিয়ে আসতেন, এখন ভোটের মাঠে ছাড়া অন্য জায়গায় রাজনৈতিক নেতাদের দেখা পাওয়া যায় না। একদিকে খাদ্য-পণ্যে ভেজাল, বাজারে মানহীন পণ্যের ছড়াছড়ি, অন্যদিকে মজুতদারি ও সিন্ডিকেট করে প্রতিটি খাদ্য-পণ্যের বাজারে আগুন দিয়ে মানুষের পকেট কাটছে একশ্রেণীর মূল্য সন্ত্রাসী। ফলে মানুষ জীবন জীবিকা চালাতে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন। আয়ের বৈষম্য চরমভাবে বেড়েছে, সংসার চালাতে না পেরে অনৈতিক পন্থার অবলম্বন যেন নিয়তিতে পরিনত হয়েছে। এ অবস্থা চলমান থাকলে সমাজে অস্থিরতা, অসন্তোষ ও সহিংষতার প্রকোপ বাড়তে পারে যা পুরো সমাজ ব্যবস্থায় চরম বিশৃংখলা তৈরী করতে পারে। এ অবস্থায় সমাজ পরিবর্তনে আগ্রহী তরুনদেরকে সংগঠিত হয়ে এ সমস্ত অনিয়ম ও অস্থিরতা দূরীকরণ এবং সাধারন মানুষের ভোগান্তি নিরসন করে বৈষমহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসার আহবান জানানো হয়েছে।
২০ মে নগরীর একটি রেস্টোরেন্ট এ কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম বিভাগ এর উদ্যোগে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় উপরোক্ত মন্তব্য করা হয়।
ক্যাব যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সভাপতি চৌধুরীকে এন এম রিয়াদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন। সম্মানিত অতিথি আলোচক ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুষদের সাবেক ডীন প্রফেসর এবিএম আবু নোমান, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী। আলোচনায় অংশনেন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাধারন সম্পাদক প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহজাহান, শ্রী শ্রী কুন্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজীব সিনহা, মাছরাঙ্গা টিভির সাবেক ব্যুরো প্রধান তাজুল ইসলাম, লিও জেলা-৩১৫বি এর সাবেক চেয়ারম্যান ডাঃ মাসবাহ উদ্দীন তুহিন, তরুন রাজনীতিবিদ এস এম আল নোমান, আইইবি’র চট্টগ্রাম কেন্দ্রের কাউন্সিল মেম্বার প্রকৌশলী সুমন বাশাক, নারী উদ্যোক্তা সাইমা সুলতানা, ক্যাব যুব গ্রুপের চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি আবু হানিফ নোমান প্রমুখ।
সভায় বলা হয় সমাজের অপরাধ, অনিয়ম ও সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজীতে যুক্তরা সুসংগঠিত আর তথাকথিত ভালো মানুষগুলো অসংগঠিত। আর এ সুযোগে গুটিকয়েক দুষ্টু লোক পুরো সমাজকে কুলষিত ও নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের হাতে এখন সমাজ, রাজনীতি ও ব্যবসা বানিজ্যসহ সকল ক্ষমতার কাঠামো। মেধাবীরা অবমূল্যায়িত হয়ে রাজনীতি বিমুখ হয়ে দেশের পেশার পেশা ছেড়ে বিদেশ পাড়ি দিচ্ছে। আবার একশ্রেণীর মানুষ নির্বাচনের সময় মনোনয়ন কিনে নেয়া, নির্বাচনী বৈতরণী পারকরতে বিপুল অর্থ খরচ করলেও দেশের দরিদ্র ও অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে এক পয়সা করতে রাজি নয়। এ ধারায় কিছু করপোরেট গ্রুপও করপোরেট সোস্যাল রেসপনসিবিলিটির (সিএসআর) নামে সরকারি ত্রাণ তহবিলে বিপুল অর্থ দান করলেও স্থানীয় সামাজিক উদ্যোগগুলিতে এক পয়সাও দিতে রাজি নয়। ফলে সাধারন মানুষের কল্যাণে স্থানীয় সমাজ পরিবর্তন উদ্যোগগুলো মুখ তুবডে পড়েছে। তরুণরা সমাজ পরিবর্তনের কাজে চেয়ে রাজনৈতিক দলের শ্লোগান দেয়া, ফেসবুক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গেম নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। সভায় ক্যাব গ্রুপ চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির পরিধি বাড়ানো, সমাজ পরিবর্তনে আগ্রহী তরুণদের সম্পৃক্ত করতে নানাবিধ কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন, দ্রুত পুনার্ঙ্গ বিভাগীয় কমিটি গঠন, চট্টগ্রাম বিভাগের সকল জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কমিটি গঠন, নিয়মিত সভা আয়োজনসহ নানা সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।