বিশ্বজুড়ে তাপপ্রবাহ আরও বাড়বে— জানালো জাতিসংঘ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিশ্বজুড়ে তাপপ্রবাহ আরও বাড়বে। বিশেষ করে উত্তর গোলার্ধের সামগ্রিক তাপমাত্রা আরও বাড়বে। একইসাথে পাল্লা দিয়ে বাড়বে দাবানল ও পানির সংকট। মঙ্গলবার জাতিসংঘ এ তথ্য দিয়েছে। তারা এমন সময়ে এ তথ্য দিলো, যখন তীব্র তাপমাত্রা ও দাবানলের সঙ্গে লড়ছে ইউরোপ ও আমেরিকা। একটু একটু করে তাপপ্রবাহে পুড়ছে সমগ্র বিশ্ব।

ওয়র্ল্ড মিটিয়োরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের বিশেষজ্ঞ জন নরিনের মতে, পরিবেশের অবক্ষয় যে হারে বাড়ছে তাতে আরও তীব্র তাপপ্রবাহের জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত মানুষের। প্রবল গরমে হাঁসফাঁস করছে ইউরোপ ও আমেরিকা। যে শহরগুলোতে শীতাতপ যন্ত্র বা পাখা একটা সময় অকল্পনীয় ছিল, সেখানেও এখন পাখা আর এসি কেনার হিড়িক। রোম ও ফ্লোরেন্স-সহ ২০টি শহরে তাপপ্রবাহের কারণে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।

আবহাওয়াবিদদের কথায়, আজ তাপপ্রবাহ সর্বোচ্চ তীব্রতায় পৌঁছতে পারে ইতালিতে। সার্ডিনিয়াতেই তাপমাত্রা হতে পারে ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্পেনের কোনো কোনো জায়গার তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুয়েছে। সেখানেও জারি করা হয়েছে তাপপ্রবাহের সতর্কতা।

আমেরিকার কিছু জায়গায় তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ক্যালিফোর্নিয়ার ডেথ ভ্যালিতে তাপমাত্রা ৫৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে নতুন রেকর্ড গড়বে বলে ধারণা আবহাওয়াবিদদের। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দাবানল। দক্ষিণ ইউরোপের একাধিক জায়গায় দাবানলের সঙ্গে লড়ছে প্রশাসন। তার মধ্যে গ্রিস অন্যতম। গ্রিসের ভিওতিয়া অঞ্চলের দের্ভেনোখোরিয়া এলাকায় এখনও লেলিহান শিখা দেখা যাচ্ছে। আগুন নেভানোর জন্য সেই অঞ্চলে জরুরি তৎপরতায় বিমান পাঠাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সুইজারল্যান্ডেও দাবানল ছড়িয়েছে।

এই গরমের প্রভাব পড়ছে পর্যটনে। ইউরোপীয় ভ্রমণ সংস্থা (ইউরোপিয়ান ট্রাভেল কমিশন) সূত্রে খবর, গরমের জন্য ইতালি, ফ্রান্স, ভূমধ্যসাগরীয় এলাকায় অম্তত ১০ শতাংশ কমেছে পর্যটন। পর্যটকেরা বেছে নিচ্ছেন চেক রিপাবলিক, ডেনমার্ক, বুলগেরিয়া ও আয়ারল্যান্ডের মতো অপেক্ষাকৃত শীতল দেশ।

তবে ক্যালিফোর্নিয়ার ডেথ ভ্যালিতে আবার দেখা গেছে অন্য চিত্র। তাপমাত্রা ৫৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের পারদ ছুঁতেই রোববার সেখানে ঢল নেমেছিল পর্যটকদের। তারা নাকি ‘গরম’ অনুভব করতে গিয়েছিলেন। উষ্ণতা বাড়ছে চীনেও। সোমবার চীনের শিনজিয়াং প্রদেশের সানবাও গ্রামে তাপমাত্রার পারদ ছুঁয়েছিল ৫২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

২০২৩ সালের জুন ও জুলাই মাসের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে বেশ কয়েকটি উষ্ণতম দিনের মুখোমুখি হয়েছে বিশ্ব। লাগাতার তাপপ্রবাহ চলছে আমেরিকা, ইউরোপ ও চীনসহ এশিয়ার বিভিন্ন অংশে। প্রশান্ত মহাসাগরে ক্রমশ তীব্র হচ্ছে এল নিনো। আর ফ্লরিডা সংলগ্ন আটলান্টিক মহাসাগরের তাপমাত্রা ছুঁয়েছে ৩২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিশেষজ্ঞদের মতে, অষ্টাদশ শতক থেকে (অর্থাৎ, যখন থেকে তাপমাত্রার রেকর্ড রাখা শুরু হয়) এত উষ্ণ গ্রীষ্মকালের অভিজ্ঞতা সম্ভবত হয়নি বিশ্ববাসীর।