চট্টগ্রাম শহরের অদূরে কর্ণফুলীর নদীর পূর্ব পাড়ে অবস্হিত বোয়ালখালী উপজেলা। শিক্ষা-দীক্ষা ,সাহিত্য সংস্কৃতি ও আন্দোলনের হাজার হাজার বছরের ঐতিহ্য আছে এই বোয়ালখালী উপজেলায়।এই বোয়ালখালীর উপজেলায় আমুচিয়া গ্রামে অবস্হিত বিখ্যাত মসজিদের নাম বুড়া মসজিদ।এর পূর্বেই রয়েছে জ্যৈষ্ঠপুরা পাহাড়।বুড়া মসজিদ পবিত্র স্হানের মত সমাদূত।এখানে জাতি-ধর্ম- বর্ণ নির্বিশেষে দেশ বিদেশ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সমাগম ঘটে বরকত,ফজিলত ও মনোবাসনা পূরণের আশায়।
নামকরণের ইতিহাস: এ মসজিদ কখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সন তারিখ কারো জানা নেই।তবে সবাই একমদ যে,এটি মোগল পিরিয়ডের শেষ দিকে এখন থেকে প্রায় ৩০০ বৎসর পূর্বে নির্মিত হয়।মোগলদের অধস্তণ পুরুষ থানাদার দীক্ষিত লোকদের পাঞ্জাগানা নামাজ আদায়ের সুবিধার্থে এ মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন ।এ মসজিদের নামকরণ সম্পর্কে জানা যায়, চট্টগ্রামের তৎকালীন প্রশাসক থানাদার ওয়াসিন চৌধুরীর বাবা একজন ইবাদত গুজার ব্যক্তি ছিলেন।তিনি ইবাদত বন্দেগীতে এতই মশগুল থাকতেন যে পারিপার্শ্বিক অবস্হা সম্পর্কে মোটেই খোঁজ খবর রাখতেন না।তিনি বুড়ো বয়সে ঐ মসজিদে নামাজ ,যিকির আজকারে দিন রাত কাটিয়ে দিতেন।বহুদিন চলে যেত তাঁর আধ্যাত্মিক সাধনায় তিনি এতই পরহেজগার ছিলেন যে,তাকে সবাই ‘বুড়া হুজুর’ নামে ডাকত।ইবাদত করতে করতে একদিন তিনি এই মসজিদ থেকেই হারিয়ে যান।এখনও কেউ সন্ধান পাননি বলে কথিত আছে,তাই তাঁর নামানুসারে এটি ‘বুড়া মসজিদ’ হিসেবে বোয়ালখালীতে প্রসিদ্ধি লাভ করে।
জানা গেছে, অল্প ক’জন মুসল্লী নামায পড়ার মত জায়গা নিয়ে ছন পাতার বেড়া এবং উপরে দু’নালি ছন দিয়ে মসজিদের প্রথম ঘর নির্মিত হয়। প্রতি বছর ছাউনি ও বেড়া পরিবর্তন করে ২০-২৫ বছর চলে এ মসজিদের কার্যক্রম। সে সময়ে সাপ, বাঘ ও জঙ্গলময় ছিল এই এলাকা। ফলে বাঘের ভয়ে ও ঝোঁপ-ঝাঁড়ের মাঝে অবস্থিত হওয়ায় এ মসজিদে মুসল্লীরা রাতে নামায আদায় করতে পারতেন না। নিরাপদ দুরত্বে থেকে মুসল্লীরা আযান দিয়ে চলে যেত।
পরে চারপাশে বাঁশের বেড়া এবং উপরে ছনের ছাউনি দিয়ে ১০-১৫ হাত লম্বা ও চওড়া করে মসজিদ নির্মাণ করা হয়। এভাবে ছিলো বহু বছর।
১৮৮৬ সালে বেড়া ও ছনের ছাউনি ঘর ভেঙ্গে যায় প্রবল ভূমিকম্পের কারণে। ভাঙা অবস্থায় জোড়া তালি দিয়ে আরো ২০-২৫ বছর চলে এ মসজিদের কার্যক্রম। পরে স্থানীয় লোকজন মাটির দেয়াল তুলে পুনঃনির্মাণ করেন এ মসজিদ। এভাবে ৪-৫ বার নির্মাণ করা হয়। প্রায় ১০০ বছর পূর্বে মসজিদের কিয়দংশ পাকাকরণ করা হয়।
১৯৪০ সালে মসজিদের পুরাতন ভিত্তি ভেঙে নতুন করে ছাদ জমিয়ে পাকাকরণ করা হয়। এই ইমারত এখনও পর্যন্ত মসজিদের মধ্যখানে বহমান আছে। ১৯৭৪ সালে ৫-৬’শ জন মুসল্লী নামায আদায় করার ব্যবস্থা করে মসজিদ সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হয়। ১৯৮৬ সালের দিকে দ্বিতীয় তলায় উন্নীত করা হয় এ মসজিদ। ১৯৭৫ সালের দিকে এ মসজিদের পাকা ভবনের গেইট নির্মিত হয়।
বলা বাহুল্য, এই মসজিদে প্রতি শুক্রবার জু’মা নামাজে এলাকার মুসল্লি ছাড়া আশেপাশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকেও মুসল্লিরা এসে নামাজ আদায় করেন। এখনো এ রেওয়াজ চালু আছে।
উত্তরসূরিদের পক্ষে নুরুন্নবী চৌধুরী বলেন, বর্তমানে মসজিদের অফিসিয়াল মোতাওয়ালি বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার, বোয়ালখালী ভূমি অফিসার( এসিল্যান্ড) , স্থানীয় চেয়ারম্যান মো. মোকারমসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে ঐতিহাসিক এ মসজিদের উন্নয়নে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে