ডেঙ্গুর টিকা আনতে চায় ভারত

আগামী আড়াই বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালের জানুয়ারির মধ্যে ডেঙ্গুর টিকা বাজারে আনার ঘোষণা দিয়েছে ভারতীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি ইন্ডিয়ান ইমিউনোলজিক্যালস লিমিটেড (আইআইএল)। ইতোমধ্যে টিকার প্রথম পর্যায়ের ট্রায়াল শেষ হয়েছে বলেও জানিয়েছেন কোম্পানির কর্মকর্তারা।

ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তেলেঙ্গানার রাজধানী হায়দারাবাদ ভিত্তিক কোম্পানি আইআইএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে. আনন্দ কুমার জানান, টিকার প্রথম পর্যায়ের ট্রায়ালে অংশ নিয়েছেন প্রায় ৯০ জন স্বেচ্ছাসেবী, যাদের সবার বয়স ১৮ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। টিকা নেওয়ার পর তাদের কারো দেহে বিরূপ কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়েনি।

আনন্দ কুমার জানান, ‘আমাদের প্রথম পর্যায়ের ট্রায়াল প্রায় শেষের পথে। এটি শেষ হওয়ার পর কমপক্ষে আরও কয়েকটি ট্রায়াল পরিচালনা করা হবে। কারণ প্রথম ট্রায়ালে কোনো টিকার কার্যকারিতা সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া সম্ভব নয়।

‘সব ট্রায়াল শেষ হতে সময় লাগবে অন্তত দুই বছর। তাই আমরা আশা করছি, আগামী ২০২৬ সালের জানুয়ারির মধ্যেই ডেঙ্গুর টিকা বাজারে আনতে পারব।’

টিকা প্রস্তুতের জন্য যে বিশেষ ভাইরাসটি ব্যবহার করেছে আআইএল, সেটি যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ (এনআইএইচ) সরবরাহ করেছে বলে জানিয়েছেন আনন্দ কুমার।

বর্ষাকালে ভারতীয় উপমহাদেশে ডেঙ্গু রীতিমতো আতঙ্কের অপর নাম। গত কয়েক বছর ধরেই প্রত্যেক বর্ষা মৌসুমে মশাবাহিত এই রোগটির ব্যাপক সংক্রমণ ও তার প্রভাবে মৃত্যু প্রায় নিয়মিত ব্যাপার হয়ে উঠেছে।

এডিস মশা এই রোগটির প্রধান বাহক। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই রোগের উপস্থিতি থাকলেও দক্ষিণ এশিয়ার

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ভারতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩১ হাজার ৪৬৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৩৬ জনের।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা ন্যাশনাল সেন্টার ফর ভেক্টর বর্ন ডিজিজ কন্ট্রোলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে ডেঙ্গুর সংক্রমণ কম ঘটলেও পরের বছর ২০২১ সালে ভারতে এই রোগের সংক্রমণের হার বেড়েছে ৩৩৩ শতাংশ। আর ২০২১ থেকে ২০২২ সালে এই এই রোগে আক্রান্তের হার বেড়েছে ২১ শতাংশ।

ভারতের প্রতিবেশী বাংলাদেশের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। চলতি বছর বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে ১ লাখ ছাড়িয়েছে, মৃত্যু ছাড়িয়েছে ৫ শতাধিক। এই আক্রান্ত-মৃত্যুর অধিকাংশ ঘটনা ঘটেছে জুন থেকে আগস্ট— এই তিন মাসের মধ্যে।

এর মধ্যে আগস্ট মাসে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি দেখছে বাংলাদেশ। ৫ শতাধিক মৃত্যুর মধ্যে আড়াই শতাধিক মৃত্যু ঘটেছে এই মাসে।

উল্লেখ্য, আইআইএল ছাড়াও আরও ২টি ভারতীয় কোম্পানি ডেঙ্গুর টিকা বাজারে আনার চেষ্টা করছে। কোম্পনি ২টি হলো সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া এবং প্যানাকিয়া বায়োটেক।