নগরীর উত্তর কাট্টলি থেকে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম পর্যন্ত সাগরিকা ফ্লাইওভারটি (ফিডার রোড-৩) যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম আউটার রিং রোডে গাড়ি চলাচলের প্রায় তিন বছর পর এর উদ্বোধন করা হয়েছে।
নগরীর সাগরিকা জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ঘেঁষে নয়শ’ মিটার দৈর্ঘ্যের ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট আউটার রিং রোডে মধ্যকার এ ফিডার রোডটি নগরে প্রবেশ কিংবা বহির্গমনে যোগাযোগ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
রোববার বিকেল ৫টায় জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ১ নম্বর গেটে আয়োজিত ফিডার রোড-৩ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ।
অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর থেকে চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী নিজ হাতে নেন । ২০০৯ সাল থেকে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) মাধ্যমে নগরীতে অনেকগুলো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। যেগুলোর কাজ শেষ হলে চট্টগ্রাম একটি মডেল নগরীতে রূপ নেবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট চিটাগং সিটি আউটার রিং রোড, বায়েজিদ বাইপাস সড়ক, কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত আউটার রিং রোড ও বাকলিয়া এক্সেস রোডের মতো মেগা প্রকল্প চট্টগ্রামে নেয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষ, বাকিগুলো বাস্তবায়নের পথে।’
সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক কাজী হাসান বিন শামসেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তফা জামাল। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও চসিকের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন, সিডিএ সচিব মো. মিনহাজুর রহমান, সিডিএ’র বোর্ড সদস্য জসিম উদ্দিন শাহ, আলী শাহ, মো. ফারুক, প্রকৌশলী মুনির উদ্দিন আহমেদ, অ্যাডভোকেট জিনাত সোহানা প্রমুখ।
ফ্লাইওভার প্রসঙ্গে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘ফ্লাইওভারটি পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট রিং রোড প্রকল্পের একটি অংশ। আমরা ফ্লাইওভারটির কাজ পুরোপুরি শেষ করেছি। এরজন্য সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অবদান সবচেয়ে বেশি। তিনি আইসিসিকে (ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল) কনভিন্স করে এ রোডটি করার সুযোগ করে দিয়েছেন। এ রোডটি যোগাযোগ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। সব ধরনের গাড়ি চলাচল করতে পারবে। তবে খেলা চলাকালে আইসিসির শর্ত অনুযায়ী যান চলাচল বন্ধ থাকবে।’
সড়কটি নির্মাণে সময় বেশি লাগার কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ সড়কটি আরও আগে শেষ হয়ে যেত। তবে রেললাইনের ওপরে ফ্লাইওভার নির্মাণের উচ্চতা নিয়ে বেশ কিছুদিন কাজ বন্ধ ছিলো। পরে কেবিনেটের সম্মতিতে ৭ দশমিক ৬ মিটারের উচ্চতা রেখেই কাজ শেষ করা হয়েছে।’
ফ্লাইওভার সরেজমিনে দেখা যায়, খেজুরতলার গোলচত্বর থেকে শুরু হয়ে ফ্লাইওভারটি শেষ হয়েছে স্টেডিয়ামের মূল গেটের দক্ষিণ পাশ বরাবর। প্রায় ১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ ফ্লাইওভারটি ৫৪ ফুট প্রস্থে নির্মাণ করা হয়েছে। ফ্লাইওভারটিতে চার লেন করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পশ্চিমে খেজুরতলা থেকে পূর্বে সাগরিকা স্টেডিয়াম পর্যন্ত ফ্লাইওভারটি মূল সড়কে যুক্ত হয়েছে স্টেডিয়াম গেটের উত্তর পাশে। রাস্তা আলোকায়নে বসানো হয়েছে ল্যাম্পপোস্ট।
প্রসঙ্গত, পতেঙ্গা থেকে সাগরিকা পর্যন্ত ‘চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় উত্তর কাট্টলি থেকে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম পর্যন্ত ফিডার রোড-৩ নির্মাণ করা হয়।
প্রায় ১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এবং ৪ লেনের উত্তর কাট্টলি থেকে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম পর্যন্ত সড়কটি চালু হলে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকামুখী পণ্যবোঝাই ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানগুলো সরাসরি রিংরোড হয়ে টোল রোডে উঠতে পারবে।
একইভাবে বিপরীত দিকে থেকে আসা গাড়িগুলো এ সড়ক ব্যবহারের মাধ্যমে নগরীতে প্রবেশ করতে পারবে। ফলে চাপ কমে যানজটমুক্ত হবে অলংকার থেকে সিটি গেট পর্যন্ত এলাকা। একইভাবে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ হয়ে রিং রোড থেকে আসা যানবাহনগুলো সহজেই কম সময়ের মধ্যে সাগরিকা হয়ে নগরীর অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্থানে প্রবেশ করতে পারবে।