আজ দইজ্জ্যার তল দিয়ে গাড়ি চলে— চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রী

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দেশের প্রথম টানেল উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চট্টগ্রামের মানুষের জন্য এটা তার উপহার। তিনি বলেন, ‘আজ দইজ্জ্যার তল দিয়ে (নদীর নিচ দিয়ে) গাড়ি চলে- অর্থাৎ টানেল। কর্ণফুলী নদী। এখানে চট্টগ্রাম বন্দর। বারবার সিলটেশন (পলি জমা) হয়। যত ব্রিজ করব তত সিলটেশন হয়। তাই সিদ্ধান্ত হয় টানেল করে দেব। এই টানেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় দেশের ও আঞ্চলিক যোগাযোগে বিরাট ভূমিকা রেখে যাবে। এখন আর ঝড় বৃষ্টির অপেক্ষা করতে হবে না। নদীর তলদেশ দিয়ে এত বড় টানেল ধরে চলে যেতে পারবেন। এই প্রথম।’

শনিবার (২৮ অক্টোবর) সকালে পতেঙ্গায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। তারপর টানেল পার হয়ে নদীর দক্ষিণ তীরে আনোয়ারায় গিয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় অংশ নেন।

কোরিয়ান ইপিজেডের মাঠে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত ওই জনসভায় প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা সংগ্রামে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ নেতাদের ভূমিকার স্মরণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চট্টগ্রামে নেতারা জীবন দিয়ে সংগ্রাম করেছেন। তাদের কথা বারবার স্মরণ হচ্ছে আজ। ৬১-৬২ সালে যখন চট্টগ্রামে আসি আজিজ কাকা (এম এ আজিজ) বলেছিলেন, পাকিস্তানিদের সাথে থাকব না। আমাদের স্বাধীন দেশ হবে। এই টাইগারপাস থেকে যুদ্ধ শুরু হবে। সেটাই হয়েছে।’

টানেল নির্মাণে চীনের প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চীনের মহামান্য রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংকে ধন্যবাদ জানাই। চীন সফরে গিয়ে উনাকে এই টানেলের কথা বলেছিলাম। আজ উদ্বোধন করেছি।’

‘এখান থেকে কক্সবাজার যেতে অনেক সময় লাগত। এখন আর বেশি সময় লাগবে না। ঢাকা থেকেও সরাসরি যাওয়া যাবে। এশিয়ান হাইওয়ের সাথে আমরা যুক্ত হব। এই টানেল ভূমিকা রাখবে। যারা সংশ্লিষ্ট আর যারা দিনারত শ্রম দিয়েছেন সেই শ্রমিকসহ সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। আজ বঙ্গবন্ধু টানেল আজ নদীর তলদেশ দিয়ে যাচ্ছে।’

এ টানেলকে চট্টগ্রামবাসীর জন্য ‘উপহার’ হিসেবে বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “আজ যে উন্নয়ন এটা একমাত্র সম্ভব হয়েছে কারণ নৌকা মার্কায় গত নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। নৌকা মার্কায় যতবার ভোট দিয়েছেন, ততবার উন্নয়ন হয়েছে।

‘গত ১৫ বছরে চট্টগ্রামে যত উন্নয়ন হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরে প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছি। চায়না ইকোনমিক জোন হবে গহিরায়। ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক প্রশস্তকরণ, মেট্রোরেল নির্মাণের সমীক্ষা চলছে সফল হলে করে দেব, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করছি। চাক্তাই কালুরঘাট মেরিন ড্রাইভের কাজ চলছে।’

‘চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার ২৫০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ করে দেব। বে টার্মিনাল করা হচ্ছে। একাধিক পানি শোধনাগার করেছি। স্যুয়ারেজ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ১১ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট নিয়েছে। দ্বিতীয় রিফাইনারির কাজ চলছে। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। ৩৫টি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাইটেক পার্ক, সফটওয়ার পার্ক, মিনি সেক্রেটারিয়েট করছি। দোহাজারী কক্সবাজার রেললাইন উদ্বোধন হবে। শিগগিরই আমি কক্সবাজারে যাব, সেই রেললাইন উদ্বোধন করতে। রাঙামাটি পর্যন্ত রেল লাইন করার চিন্তা আছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাতারবাড়িতে ডিপ সি পোর্ট হচ্ছে। কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র করেছি। চট্টগ্রাম বাংলাদেশের বাণিজ্য রাজধানী। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন বলেই সম্ভব হয়েছে এসব। আমরা যখন উন্নয়ন করি তখন ওই বিএনপি জামাত ধংস করে। জাতির পিতার হত্যার সঙ্গে ওই জিয়াউর রহমান সহ তারা জড়িত ছিল। তারা হত্যা ছাড়া কিছু জানে না। ক্ষমতায় থাকলে দুর্নীতি লুটপাট করে। আমাকে সহ গ্রেনেড মেরে হত্যা করতে চেয়েছিল।’

চীনের রাষ্ট্রপতির শুভেচ্ছা বার্তা
এর আগে টানেলের উদ্বোধনী পর্বে টানেলের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে অনুষ্ঠানের সূচনা বক্তব্য দেন সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মনজুর হোসেন।চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন উপলক্ষে যে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান সেটি বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও হোয়েন সেটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন।

শুভেচ্ছা বার্তায় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। দুই দেশের কৌশলগত সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে আমি অত্যন্ত গুরুত্ব দিই। চীনের দ্য বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভককে এগিয়ে নেওয়াকে আমি আরো এগিয়ে নিতে ইচ্ছুক।’

প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিসিসিসি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রতিষ্ঠানের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর হাতে বঙ্গবন্ধু টানেলের একটি রেপ্লিকা তুলে দেন।

বঙ্গবন্ধু টানেল নিয়ে রচিত থিম সং এর সাথে নাচ পরিবেশন করেন শিল্পীরা। এরপর ৫২৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং দুটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।

জনসভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুলে কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ।

উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, আওয়ামী লীগের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী, এবিএম ফজলে করিম, এম এ লতিফ, মোস্তাফিজুর রহমান, ওয়াসিকা আয়শা খান, আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী, মহিউদ্দিন বাচ্চু, নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি ও খাদিজাতুল আনোয়ার সনি, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম।

জনসভায় উপস্থিত ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, উত্তর জেলার সভাপতি এম এ সালাম ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. আতাউর রহমান।

টানেল উদ্বোধন উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকেট ও স্মারক নোট উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।