‘গণমুখী রাজনীতিবিদদেরই সংসদে যাওয়া উচিত। যাদের দুয়ারে গরিবের ঠাঁই নেই, তাদের বর্জন করতে হবে। দুর্নীতিবাজদের ঠেকানোর এখন পবিত্র সময়। সরকারের উদ্যোগের সর্বোচ্চ সুফল নিশ্চিতে দায়িত্বশীল গণপ্রতিনিধি নির্বাচিত করা দরকার। চট্টগ্রামের উন্নয়নে সমন্বয় নিশ্চিত করতেই হবে।’
এমন সব নাগরিক প্রস্তাবনা উঠে এসেছে চট্টলবীর এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী স্মারক আলোচনা থেকে। এতে চট্টগ্রামের বর্তমান-প্রাক্তন পাঁচ মেয়রই স্মরণ করলেন চট্টলবীর মহিউদ্দিন চৌধুরীকে।
শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে চট্টগ্রাম নাগরিক উদ্যোগ ও বাংলাদেশ মিডিয়া সেন্টারের উদ্যোগে ‘গণমুখী রাজনীতি ও এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী’ শীর্ষক স্মারক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
পেশাজীবী ও সাংবাদিক নেতা রিয়াজ হায়দার চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনায় চট্টলবীরের সন্তান শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহরের উন্নয়ন সমন্বয়ে পরামর্শকের ভূমিকা রাখতে এক্স মেয়র ফোরাম এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। পূর্বসূরীদের পরামর্শ নিলে কেউ ছোট হয় না । তাতে কাজের সক্ষমতা বাড়ে এবং সাফল্য আসে। হীনমন্যতায় না ভুগে সবার সাথে সংযোগ স্থাপন করে কাজ চালিয়ে যাওয়াই গণমুখী রাজনীতিবিদের চরিত্র।’
চট্টগ্রাম-৯ আসনের নৌকার এই প্রার্থী মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের কাজ ত্বরান্বিত করে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে আরো শক্তিশালী করতে আগামী নির্বাচনে নাগরিক দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
চট্টলবীর স্মরণে চট্টগ্রাম সিটির বর্তমান ও প্রাক্তন পাঁচ মেয়র এক মঞ্চে বসানোর উদ্যোগে আগ্রহের কমতি ছিল না এই স্মারক আলোচনা আয়োজনে। সাংগঠনিক ও পারিবারিক ব্যস্ততায় কেউ কেউ উপস্থিত হতে না পারলেও এতে প্রথমেই ছুটে এলেন চট্টগ্রামের প্রথম মেয়র ও জাতীয় পার্টির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী। নির্বাচনী প্রচারণা ও রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত থাকায় অনলাইনে যুক্ত হয়ে বর্তমান মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী ও সদ্য সাবেক মেয়র, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন আয়োজনের সাথে যুক্ত হয়ে চট্টলবীরের রুহের মাগফেরাত কামনা করে তাঁর গণমুখী আদর্শ থেকে নতুন রাজনৈতিক কর্মীদের শিক্ষা গ্রহণের অনুরোধ জানান। একই সাথে অনলাইনে আয়োজনের সাথে একাত্মতা জানিয়ে সাবেক মেয়র মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন ও এম মনজুর আলম প্রয়াত নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরীর ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক স্মৃতিচারণ করেন। পাশাপাশি রাজনীতিকে গণমুখী করতে সহমর্মিতার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
অতিথি আলোচক হিসেবে অংশ নেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী, বীর মুক্তিযোদ্ধা কলামিস্ট প্রফেসর মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি ও সাবেক সিভিল সার্জন ডা. সরফরাজ খান বাবুল, দৈনিক নয়াবাংলার সম্পাদক এনায়েতুল্লাহ হিরু, চট্টগ্রাম জেলা পিপি অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, সৃজনশীল প্রকাশনা পরিষদ সভাপতি কবি শাহ আলম নিপু, জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক নাট্যজন সাইফুল আলম বাবু, শ্রীশ্রী জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার সংগঠক পল্টু লাল সাহা, বন্দর শ্রমিক নেতা আবু জাফর আজাদ, শিক্ষাবিদ রেজাউল করিম, বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি চট্টগ্রাম অঞ্চলের পক্ষে অধ্যক্ষ আবু তৈয়ব, সাংস্কৃতিক সংগঠক দেওয়ান মাকসুদ আহমেদ ও অনুপ সাহা, চট্টগ্রাম ফটোজার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রাজেশ চক্রবর্তী, চট্টগ্রাম টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক লতিফা আনসারি রুনা, চট্টগ্রাম বন্দর শ্রমিক লীগ নেতা আবু জাফর আজাদ, নারী নেত্রী মনিকা ভট্টাচার্য, উন্নয়ন সংগঠক নাসরিন সুলতানা খানম প্রমুখ।
জননেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে নিবেদিত কবিতা ও ছড়া আবৃত্তি ও উপস্হাপন করেন টিভি সংবাদ পাঠক, আবৃত্তিকার বোধনের জাভেদ হোসেন, ছড়াকার সংসদের সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম মোদাচ্ছের আলী, জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়া বিতার্কিক ও আবৃত্তিকার প্রযুক্তা প্রেরণা চৌধুরী।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন প্যানেল মেয়র আব্দুস সবুর লিটন, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সিনিয়র সহ সভাপতি রুবেল খান, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা জামশেদুল আলম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক উপ অর্থ সম্পাদক ও তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর, কবি ও শিক্ষক শামীম ফাতেমা মুন্নী, দক্ষিণ জেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মুহাম্মদ ইদ্রিস, শিক্ষক রাজশ্রী মজুমদার চৌধুরী, সুমনা নাগ, শিল্পী শিল্পী ভট্টাচার্য, তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান তারেক, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সালাউদ্দিন সাকিব, সাংবাদিক মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী মিঠু, বাংলাদেশ ত্বরিকত পরিষদের (বিটিপি) কেন্দ্রীয় তথ্য প্রযুক্তি সম্পাদক শাহ মিডু, তরুণ সংগঠক ইফতেখার জাভেদ, নোমান উল্লাহ বাহার, আলোকচিত্রী ও সংগঠক আসিফ ইকবাল, নারী উদ্যোক্তা সোনিয়া আজাদ, সংগঠক নেছার আহমেদ খান, সাবেক ছাত্রনেতা শফিউল আজম জিপু, আশরাফ আলী সাগর, শাহরিয়ার মুনির জিসান প্রমুখ।
আলোচনায় চট্টগ্রামের প্রথম মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী প্রথম নির্বাচিত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী সম্পর্কে বলেন, ‘মহিউদ্দিন ঈমানদার মানুষ ছিলেন । ঈমান ঠিক রেখেছেন। অন্তরে যা, মুখে তাই ছিল।’
এ সময় মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছাত্র রাজনীতি, মেয়র নির্বাচন, বিএনপিবিরোধী আন্দোলন ও সিটি করপোরেশন থেকে গ্রেপ্তার হওয়া এবং নির্বাচন করা না করা সংক্রান্ত অপ্রকাশিত তথ্য বেশকিছু তথ্য উপস্থাপন করেন মাহমুদুল ইসলাম।
সভাপতির বক্তব্যে রিয়াজ হায়দার চৌধুরী পেশাজীবীদের আন্দোলন, শ্রমিক শ্রেণির সংগ্রাম, ৯১ এর ঘূর্ণিঝড় ও বন্দরটিলা হত্যাযজ্ঞ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, গণজাগরণ সহ নানা সংগ্রামে চট্টলবীর মহিউদ্দিন চৌধুরীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা তুলে আনেন। প্রতিবছর মহিউদ্দিন চৌধুরী স্মারক বক্তৃতার উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।