বিএম ডিপোতে নিহতদের ২ কোটি, আতহদেরকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের দাবিতে রিট

সীতাকুন্ড প্রতিনিধি :: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে নিহতদের প্রত্যেককে দুই কোটি এবং আহতদের প্রত্যেককে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে। একই সঙ্গে রিটে ভয়াবহ এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

বুধবার (২৯ জুন) জনস্বার্থে ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে এ রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোঃ হুমায়ুন কবির পল্লব, ইশরাত হাসান ও জামিউল হক ফয়সাল।

রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব, শিল্প সচিব, বাণিজ্য সচিব, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক, স্মার্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিএম কনটেইনার বিডি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ২০ জনকে বিবাদী করা হয়েছে।

রিট আবেদনে বলা হয়, গত ৪ জুন রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ আগুনে অর্ধশত মানুষ নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন। অনেকেই মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। খবরে প্রকাশ স্মার্ট গ্রুপের বিএম কন্টেইনার নামক কোম্পানির দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে ঘোষণা ছাড়াই মজুত করার কারণে আগুনে হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ফায়ার সার্ভিসের কাছে মজুত করা রাসায়নিক পদার্থগুলোর প্রয়োজনীয় তথ্য না থাকায় অনেক উদ্ধারকর্মী নিহত এবং আহত হয়েছেন। বাংলাদেশে এর আগেও তাজরিন গার্মেন্টস কারখানায় আগুন, রানা প্লাজা ভবন ধসে হাজারো প্রাণ ঝরলে পোশাক কারখানায় বিদেশি ক্রেতার চাপে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থায় অগ্রগতি হলেও অন্যান্য কারখানায় সঠিক অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। ফলে এসব কারখানায় নিয়মিতভাবেই অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটে চলছে। সাম্প্রতিক সেজান জুস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে বহু হতাহত হয়েছেন। বিদেশি ক্রেতাদের কোনো চাপ না থাকার কারণে সংশ্লিষ্ট কারো নজর নেই। তাছাড়া অগ্নি নির্বাপক বাহিনীর প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে রাসায়নিক দাহ্য পদার্থে সৃষ্ট আগুন নিয়ন্ত্রণে অক্ষম।

রিটে কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ এবং তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ আদায়ের কথা বলা হয়েছে।

বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ-৩২ অনুযায়ী জীবনের অধিকার একটি মৌলিক অধিকার। ফলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩২ সরাসরি লঙ্ঘন করেছেন। রিটে আবেদনে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে দুই কোটি টাকা এবং আহত প্রত্যেককে ৫০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে আহতদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা বিনামূল্যে দেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য,গত ৪ জুন দিবাগত রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি এলাকায় অবস্থিত বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে বুধবার (৮ জুন) সকাল পর্যন্ত ৪৯ জন নিহত হয়েছেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল, পার্কভিউ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন আরও অগ্নিদগ্ধ শতাধিক শ্রমিক-কর্মকর্তা।