চট্টগ্রামের পটিয়ার শোভনদন্ডী ইউনিয়নের রশিদাবাদ গ্রামের একটি জমির দলিল নিয়ে চলছে তুলকালাম। দলিলটি আদালত হয়ে এসিল্যাণ্ড, সাব-রেজিষ্ট্রার ও সিআইডি পর্যন্ত গড়িয়েছে। রশিদাবাদ মৌজার বি.এস নম্বর- ১১৮৯ খতিয়ানের দলিল নম্বর-১৮৮ এর মালিক দেখানো হয়েছে ওই এলাকার মৃত কান্দর আলী চৌধুরীর পুত্র নুরুল করিম ও সাইফুল করিমকে। তাঁরা ওই জায়গাটি বিক্রি করেছে মোতালেব চৌধুরীর ছেলে শফিউল হাসান নামের আরেক ব্যক্তির কাছে। দলিলটি ভুয় দাবি করে একটি পক্ষ পটিয়ার সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা নং-৫২০/২০২২ করলে সিআইডিকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। একইভাবে পটিয়ার সহকারি কমিশনার (ভূমি) আদালতে অপর একটি মিছ মামলা নং-৩/২০২২ দায়ের করলে তাঁরা মূল দলিল তল্লাশি দিয়ে পিলে চমকে যাওয়ার মতো তথ্য পেয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট দলিল ও খতিয়ান বিশ্লেষণে দেখা যায়, আর.এস খতিয়ান নম্বর-৫৩,আর এস দাগ নং-১২৩৮ এ-জমির পরিমান রয়েছে ১৪ শতক। ওই দলিলের মূল মালিক রশিদাবাদ এলাকার রহমত আলী চৌধুরীর পুত্র মাওলানা খলিলুর রহমান। তিনি ১৯৭৫ সালে ১০৫ বছর বয়সে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর প্রায় ১৩ বছর পর অর্থাৎ ১৯৮৮ সালে ২৪ জানুয়ারি স্থানীয় সাইফুল করিম চৌধুরীর পুত্র রেজাউল করিম চৌধুরী বাবুল মাওলানা খলিলুর রহমানের কাছ থেকে জায়গাগুলো কিনে নিয়েছেন বলে ১৮৮ নং দলিল (তারিখ-২৪/০১/১৯৮৮ইং) নামজারী খতিয়ান নং-১১৮৯ সৃজন করেন।
এদিকে দলিলটি ভুয়া দাবি করে মাওলানা খলিলুর রহমানের নাতি মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ পটিয়ার সহকারি কমিশনার (ভূমি) কাছে নামজারী মামলা নম্বর ৫-২৫০৯/১২ এর বিরুদ্ধে মিছ মামলা নং-০৩/২০২২ দায়ের করেন। এছাড়া পটিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে দলিল নং-১৮৮ (তারিখ ২৪/০১/১৯৮৮ ইং) বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা দায়ের করেন।
গত ২৬ জানুয়ারি সহকারী কমিশনারের (ভূমি) তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, নুরুল করিম ও সাইফুল করিমের সৃজিত ১১৮৯ খতিয়ানের বিএস দাগ নম্বর ১০৮৪ মৌজা রশিদাবাদের ১৮৮ (তারিখ ২৪/০১/১৯৮৮ ইং) নম্বর দলিলটি ভুয়া।
এসিল্যান্ড উল্লেখ করেছেন, ৩১/০১/২০২৩ ইং তারিখে চট্টগ্রাম সদর রেজিস্ট্রার রেকর্ড রুমের বালামে দেখা যায়, ওই দলিলের দাতা রশিদাবাদ মৌজার প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরবর্তী এলাকার মৌজা হরিনখাইনের ৬ নং কুসুমপুরা ইউনিয়নে। মৌজা হরিনখাইনের ১৮৮ নম্বর দলিলের (তারিখ-১২/০১/১৯৮৮ ইং) অংশীদার হিসেবে দেখা যায় আবু তালেব ও মোহাম্মদ আলী। ওই দলিলের নম্বর বসিয়ে কৌশলে রশিদাবাদ মৌজার জমি বলে চালিয়ে দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে নামজারী করেন।
জানা গেছে, রশিদাবাদ মৌজার ১৮৮ নম্বর ভুয়া দলিলের জায়গাটি স্থানীয় মোতালেব চৌধুরীর ছেলে শফিউল হাসান ২০১২ সালে দলিল নং-৩৯৪৫ ও ৩৯৬৯ (তারিখ-০৯/৪/২০১২) মূলে নুর করিম ও সাইফুল করিমের কাছ থেকে কিনে নেন।
১৪ শতক ওই জায়গার মূল মালিকের অংশীদার দাবিদার মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ হাবিব জানান, ভুয়া দলিলের মাধ্যমে খতিয়ান সৃজনের ব্যাপারে আদালত সিআইডিকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। তাঁরা তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছেন।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে মোতালেব চৌধুরী বলেন, যে দলিলের কথা বলা হচ্ছে সেটা আমাদের না। বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।