স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন বিভিন্ন চরমপন্থী দলের তিন শতাধিক চরমপন্থী ও সর্বহারা সদস্যরা। রোববার (২১ মে) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন তারা।
অস্বাভাবিক জীবন ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসায় নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থীদের স্বাগত ও ধন্যবাদ জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এতে সভাপতিত্ব করেন র্যাব ফোর্সেস মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেন।
র্যাব ফোর্সেস এর তত্ত্বাবধানে সিরাজগঞ্জে অবস্থিত র্যাব-১২ এর ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, রাজবাড়ী জেলার ৩২৩ জন চরমপন্থীর সদস্য ২১৯টি দেশি-বিদেশি অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদসহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, র্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে পেশাদারিত্ব, দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, জনমানুষের নিরাপত্তা বিধান ও সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে প্রশংসীয় ভূমিকা পালন করে আসছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় জনগণের আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক হিসেবে এ বাহিনী মাদক, অস্ত্র, জঙ্গিসহ বিভিন্ন ধরণের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে ইতিমধ্যে জনমনে সুদৃঢ় অবস্থান তৈরিতে সক্ষম হয়েছে। অপরাধ দমনে র্যাব শুধু আভিযানিক প্রক্রিয়ায় সীমাবদ্ধ থাকেনি। ইতিপূর্বে যে সকল জঙ্গি ও জলদস্যুরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে অন্ধকার জীবন থেকে ফিরে আসতে চেয়েছে তাদের আত্মসমর্পণ, পুনর্বাসন ও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ করে দিযেছে র্যাব। যারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে না তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সন্ত্রাসীরা চর এবং দুর্গম এলাকায় পালিয়ে থেকেও রক্ষা পাবেন না। এ জন্য র্যাব ও পুলিশকে অত্যাধুনিক সরঞ্জাম দেওয়া হচ্ছে।
র্যাবের বহুমাত্রিক কার্যক্রমে অপরাধীরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছে। র্যাব শুধু অপরাধ দমনে অভিযানেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। তারা গবেষণা ও প্রশিক্ষণের আলোকে সৃষ্টিশীল ও সময়োপযোগী নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করে পুনর্বাসনের মাধ্যমে অপরাধীদের স্বাভাবিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। যার প্রতিফলন ঘটেছে বিভিন্ন মানবিক ও সৃষ্টিশীল প্রকল্পের মাধ্যমে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে র্যাব সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে র্যাবের তত্ত্বাবধানে সুন্দরবন, কক্সবাজার, মহেশখালী ও বাঁশখালী অঞ্চলের ৫০টি জলদস্যু বাহিনীর ৪০৫ জন জলদস্যু বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করেছে ও আত্মসমর্পণকৃত জলসদস্যুদের সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। ইতিপূর্বে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে ভুল বুঝতে পেরে তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাওয়া অর্ধশতাধিক জঙ্গিকে মনস্তাত্বিবক পরিবর্তনের মাধ্যমে সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে র্যাব। যারা আজকে অস্ত্রসহ আত্মসমর্পন করেছেন তাদের পুনর্বাসনে সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তবে এদের কেউ যদি পুনরায় বিপথগামী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি র্যাবের মহাপরিচালক খুরশিদ হোসেন বলেন, দেশের উন্নয়নে কাউকে বাধাগ্রস্ত করতে দেওয়া হবে না। পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় জনবল ও সামর্থ্য রয়েছে। কীভাবে সস্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমন করতে হয় তা আমাদের জানা আছে।
আত্মসমর্পণের সুযোগ খুঁজছে। অপরাধ জীবন থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাওয়া এসব চরমপন্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করে র্যাব। চরমপন্থীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে ২০২০ সাল হতে র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরের নির্দেশনায় র্যাব-১২ কার্যক্রম শুরু করে। প্রাথমিকভাবে র্যাব চরমপন্থীদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং চরমপন্থীদের পরিবারের সদস্যদেরকে হস্তশিল্পসহ বিভিন্ন কর্মমুখী প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে তাদের স্বাবলম্বী করার ব্যবস্থা করে। র্যাবের সময়োপযোগী এ সকল উদ্যোগ গ্রহণের ফলে চরমপন্থী পরিবারের সদস্যরা অনুপ্রাণিত হয় এবং বিভিন্ন চরমপন্থী দলে থাকা সদস্যদেরকে তাদের পরিবারের পক্ষ হতে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে থাকে। পরবর্তীতে র্যাব ফোর্সেস চরমপন্থীদের পরিবারের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সমন্বয় সাধন করে চরমপন্থীদেরকে আত্মসমর্পণ করতে উৎসাহী করে এবং সরকারের পক্ষ হতে সহযোগিতার মাধ্যমে তাদেরকে পুনর্বাসন, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাকরণ এবং প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা প্রদানের ব্যাপারে আশ্বস্থ করে।