ন্যাশনাল ইয়ুথ কনফারেন্সে ‘আমিও জিততে চাই’ ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন

‘তরুণদের প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দিতে রাজনৈতিক দলগুলির প্রতি আহ্বান’

রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় তরুণদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোকে তরুণদের কথা শুনতে হবে। ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে স্ট্রেংদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ প্রকল্পের আওতায় ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত ‘ন্যাশনাল ইয়ুথ কনফারেন্স’- এ অংশগ্রহণকারীরা এই কথা তুলে ধরেন।

বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) তারিখে শেরাটন ঢাকায় দিনব্যাপী এই সম্মেলনে সারাদেশ থেকে রাজনীতির সাথে যুক্ত এবং রাজনীতি সচেতন প্রায় ২০০ জন তরুণ প্রতিনিধি এই সম্মেলনে অংশ নেন। ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল এর উদ্যোগে দেশের ১৮ টি জেলায় নাগরিক সংলাপ থেকে পাওয়া নাগরিক প্রত্যাশা এই সম্মেলনে তুলে ধরা হয়।

পাশাপাশি, নাগরিকদের প্রত্যাশার উপর গুরুত্ব দিয়ে ‘আমিও জিততে চাই’ নামক এক-বছর মেয়াদী একটি প্রচারণা ক্যাম্পেইন এর উদ্বোধন করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস, ইউএসএআইডি মিশন ডিরেক্টর এইচলিম্যান, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ, বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান এবং জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল

সম্মেলনে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ছাড়াও বিভিন্ন যুব সংগঠনের প্রতিনিধি ও রাজনীতি সচেতন তরুণ-তরুণীরা অংশগ্রহণ করেন।

অ্যাডভোকেসি ক্যাম্পেইন উদ্বোধন করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বলেছেন, যখন নির্বাচনে সকল ধরণের মানুষের প্রতিনিধিত্বের ‍সুযোগ থাকে তখনই সেটা একটা গণতান্ত্রিক নির্বাচন হয়। তিনি আরো বলেন, ‘আমি শুনেছি নানা কারণে রাজনীতিতে তরুণদের আগ্রহ কমে গেছে। এ বিষয়ে দলগুলোর যথেষ্ট উদ্যোগেরও ঘাটতি রয়েছে’। তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তরুণ ও নারীদের অংশহণ থাকা উচিত।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বলেছেন, ‘আমরা তরুনদের কথা শুনি না, তবে আমাদের তরুণদের কথা শুনতে হবে। তিনি আরো বলেন, তরুণদের রাজনৈতিক দলের কাছে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানাতেই হবে, কারন কর্মসংস্থানের সুযোগ তাদের অধিকার।

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, বিদ্যমান নানা সংকটের কারণে তরুণরা রাজনীতিতে আসতে ভয় পায়। সংকট উত্তরণে এবং নতুন চিন্তা ভাবনার প্রতিফলন ঘটাতে তিনি তরুণদের রাজনীতিতে যোগ দেয়ার আহ্বান জানান।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, তরুণরা শুধু ভবিষ্যত নয়, তরুণরা বর্তমানও। সামাজিক অগ্রগতিতে তরুণরা সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে আসছে বলে তিনি মনে করেন।

ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের চিফ অফ পার্টি ড্যানা এল. ওল্ডস তার বক্তব্যে বলেন, এই সম্মেলনে তরুণরা এসে সিনিয়র রাজনৈতিক লিডারদের সামনে সরাসরি তাদের ইস্যুগুলো তুলে ধরতে পেরেছে, যা বিভিন্ন জেলা থেকে উঠে এসেছে। তিনি আরো বলেন, নাগরিকদের এই ইস্যুগুলো রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছে পৌছাতে আমাদের অ্যাডভোকেসি ক্যাম্পেইন ‘আমিও জিততে চাই’ আজ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো।

সম্মেলনে, তরুণদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং অগ্রাধিকারগুলিকে প্রতিনিধিত্ব করে এমন চারটি বিষয়ের উপর চারটি ভিন্ন ভিন্ন প্যানেলে ইয়ুথ টক অনুষ্ঠিত হয় সেগুলো হলো ১) উদ্যোক্তা তৈরি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ, ২) রাস্তায় সমস্যা – গণপরিবহন, পাবলিক টয়লেট এবং নিরাপত্তা ৩) প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জন্য স্বাস্থ্যসেবা এবং ৪) তরুণদের রাজনৈতিক উদাসীনতা হ্রাসকরণ।

প্রত্যেক প্যানেলে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ ছাড়াও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করেন। এসব প্যানেল আলোচনায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ছিলেন নাহিম রাজ্জাক এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। বিএনপির পক্ষ থেকে ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান সালেহ প্রিন্স ও তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজীজুল বারী হেলাল এবং জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে ছিলেন সহ-সভাপতি আহসান আদিলুর রহমান, প্রেসিডিয়াম সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ড. মেহেজাবীননেছা রহমান।

আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির তরুণ নেতাদের নিয়ে গঠিত ‘মাল্টি পার্টি অ্যাডভোকেসি ফোরাম’ (এমএএফ) এর পক্ষ থেকে সূচনা বক্তব্য রাখেন এমএএফ, ঢাকার সহসভাপতি সাইদুর রহমান মিন্টু ও সাধারণ সম্পাদক নূর জাহান আক্তার।

আলোচনা ছাড়াও ইন্টারেক্টিভ সেশনে মতামত উপস্থাপন, পারস্পারিক মিথস্ক্রিয়া ও বিভিন্ন বুথের কার্যক্রমে তরুণদের ব্যাপক অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা যায়।

ইউএসএআইডি সম্পর্কে
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ইউএসএআইডি’র মাধ্যমে বাংলাদেশকে আট’শ কোটি ডলারেরও বেশী উন্নয়ন সহায়তা প্রদান করেছে। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিভিন্ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাংলাদেশের কোভিড-১৯ মোকাবেলায় ৭ কোটি ডলারের বেশি প্রদান করেছে। ২০২০ সালে ইউএসএআইডি বাংলাদেশের জনগণের জীবনমান উন্নয়নে ২০ কোটিরও বেশী ডলার প্রদান করেছে। ইউএসএআইডি বাংলাদেশে যে সকল কর্মসূচিতে সহায়তা প্রদান করে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও অনুশীলনের প্রসার, খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সুবিধাদির সম্প্রসারণ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সেবার উন্নয়ন ও অভিযোজন এবং পরিবেশ সুরক্ষার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানো।