হিমেল বাতাসে সুনসান সবুজের এক প্রাকৃতিক স্পট কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরে কেইপিজেড। চারদিকে সবুজের নয়নাভিরাম দৃশ্য, সড়ক, ফলের বাগান, কয়েকটি কৃত্রিম লেকে ভাসমান পদ্ম আর পাখির ওড়াওড়ি এবং চেনা দৃশ্যের যেন খুনসুটি। এই ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোনে কেউ পরিদর্শনে এলে এমন দৃশ্যই দেখতে পাবেন। নানা রঙের ছোট-বড় দেশীয় পরিযায়ী পাখি। সব মিলিয়ে কেইপিজেড এলাকায় অন্যরকম এক আবহ তৈরি হয়েছে। নিজেদের বাঁচার প্রয়োজনে হাজার-হাজার মাইল পথ উড়ে এ সময়ে ঝাঁক বেঁধে পাখি এখানে আসে আবার দুই-আড়াই মাস পর চলে যায়। অনেক পাখি স্থায়ীভাবে থেকে যায়। অদূরে কালো পানকৌড়ির ঝাঁক। কচুরিপানার ফাঁকে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে বেগুনি কালেমের বিচরণ। কেইপিজেড ছাড়াও আনোয়ারা উপজেলার বিভিন্ন জলাশয়, দিঘি, লেকে, সমুদ্র উপকূলের আশপাশের এলাকা এখন পাখিদের অভয়ারণ্য। এসব স্থান ভ্রমণে পর্যটকদের যোগ করছে বাড়তি আনন্দ।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঝাঁক বেঁধে কেপিজেড লেকে চারপাশে ডানা মেলে ওড়াওড়িতে ব্যস্ত। ৮ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে মহড়া শেষে নেমে আসে লেকের জলে। একসঙ্গে হাজারো পাখির জলকেলিতে বেড়ে যায় লেকের সৌন্দর্য। উপজেলার হাইলধর ইউনিয়নের খাসখামা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন সাত্তার দিঘিতে হাজারো অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত। কখনো এক সাথে পানিতে ডুব দিয়ে নিস্তরঙ্গ দিঘিতে ঢেউ তোলা আবার কখনো ঝাঁক বেঁধে আশেপাশে উড়ে উড়ে চক্কর দেয় আবার কখনো দিঘির জলে ভেসে বেড়ায়। পাখিদের এমন কলতান উপভোগ করার জন্য স্থানীয় বিভিন্ন বয়সী মানুষ দিঘির পাড়ে বিকেলটা উপভোগ করে।
শতাধিক প্রজাতির অতিথি পাখি এ সময় এখানে আসে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কুস্তি হাঁস, জিরিয়া হাঁস, পাতারি হাঁস, রাজ হাঁস, নীলশির, কানি বক, ধূসর বক, সাদা বক, জল ময়ুর, ডুবুরি, পানকৌড়ি, গঙ্গা কবুতর, দলপিপি, রাজসরালি। শীত মৌসুম শেষ হওয়ার পর অধিকাংশ পাখি ফিরে গেলেও পানকৌড়ি ও কিছু বক এখানে স্থায়ীভাবে থেকে যায় বলে জানিয়েছেন ইপিজেড কর্তৃপক্ষ।
কেইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ নানা উদ্যোগ নিয়েছে। শীতের মৌসুমে পাখির আগমন দিন দিন বাড়তে থাকে। ইপিজেডের ১৭টি কৃত্রিম লেকে পাখিদের জন্য আবাসন সৃষ্টি হয়েছে।
খাসখামা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জ্বীনপ্রিয় বড়ুয়া জানান, লোকমুখে শোনা প্রায় তিন দশক ধরে এই দিঘিতে প্রতিবছর হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি আসে। এই পাখি সাধারণত যেখানে সেখানে অবস্থান করে না। যেসব স্থানকে নিরাপদ মনে করে সেখানেই তারা থাকে। আমার কাজের ফাঁকে ফাঁকে আমি এদের বিচরণ পর্যবেক্ষণ করি। পরিবেশটাকে আপন করে নিয়েছে বলে এরা প্রতি মৌসুমে ছুটে আসে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সমরঞ্জন বড়ুয়া বলেন, বিগত বছরগুলোর তুলনায় অতিথি পাখির সংখ্যা কমে আসছে। দিন দিন পাখিদের অভয়ারণ্য হিসাবে খ্যাত জলাশয়গুলো ভরাট হচ্ছে। এরা শুধু পরিবেশের বন্ধু নয়, অতিথি বৎসল বাঙালির কাছে এরা অতিথিও বটে! কিন্তু পরিতাপের বিষয়, অসচেতন শিকারীর পাশাপাশি সৌখিন শিকারীরাও পরিযায়ী পাখির বাস্তুসংস্থান রোধের জন্য দায়ী। সমাজের সকলস্তরের মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ প্রয়োজন।