ইকবাল কবির, ঢাকা ব্যুরো চীফ :: ১১ ফেব্রুয়ারী দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনী হত্যার ৭ বছর পূর্ণ হলো। গত ৭ বছরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এই হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে র্যাবসহ আইন সহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এ যাবৎ ৫৪ বার সময় চেয়েছে আদলতে। শুধু তারিখ আর তারিখ।
এদিকে নিহত সাংবাদিক সরওয়ার সাগরের মা সালেহা মনির আক্ষেপ করে বলেন, আমি মহান আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়েছি আমার একমাত্র ছেলে ও তার বউ হত্যার বিচার।
তিনি বলেন, আমি আজ ছয় বছর ধরে অন্ধকারে আছি। আমার সন্তান ও বউমাকে কেন খুন করা হলো। তা আজো জানতে পারলাম না।
৪ ফেব্রুয়ারী পুরান ঢাকার নবাবপুরে নিহত সাগরের মায়ের সঙ্গে অন্তরঙ্গ আলাপকালে তিনি সিটিজি সংবাদ.কম’কে আরো বলেন, আমি একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে চোখের জল ফেলতে ফেলতে শুঁকিয়ে ফেলেছি।
তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, বিশ্বে তিনি ক্ষমতাবান ১০০ প্রধানমন্ত্রীদের একজন। তিনি আন্তরিক হলেই আমার সন্তান হত্যার রহস্য উদঘাটিত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
তিনি প্রশ্ন রাখেন, সাগর রুনীর হত্যাকারী কি প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাবান? এই রহস্য কি অজানা কারণে উদঘটিত হচ্ছে না !!!?
সন্তান হারা ৬৬ বছরের বৃদ্ধা বলেন, শপথ নিয়ে রেখেছি আমার সন্তানের খুনী আটক ও হত্যার কারণ বের না হওয়া পর্যন্ত আমি তাদের কবর জিয়ারত করতে যাবো না।
তিনি বলেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমি দুনিয়াতে বেঁচে থাকি আর না থাকি এই বাংলার মানুষ একদিন সাগর-রুনী হত্যার বিচার হতে দেখবে।
তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলাম; একদিন না একদিন এই খুনীদের বিচার আল্লাহ করবেই। ৪০ বছর পর হলেও সেই বিচার দেখলাম।
তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৪০ বছর পর হলেও আইনী প্রক্রিয়ায় তার খুনীদের বিচার করলেন। নারায়নগঞ্জের ৭ খুনের আসামীরা দেশের মন্ত্রী মায়া সাহেবের মেয়ের জামাতা কর্ণেল, মেজর, কমান্ডারসহ প্রভাবশালীদের বিচার হলো এমনকি পুরান ঢাকার বিশ্বজিৎ হত্যাকারীদের বিচার হলো অথচ আমার ছেলে হত্যার বিচার হলো না।
সালেহা মনির বলেন, সাগর রুনী হত্যার কয়েকদিন পরই রুনীর মা ও আমাকে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের শান্তনা দিয়ে বলেছিলেন, খুনীদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে। আর সাগর রুনীর একমাত্র ছেলে মেঘ এর দায়িত্ব আমার (প্রধান মন্ত্রী)। তিনি প্রশ্ন রাখেন কই আমার মেঘের দায়িত্ব তো তিনি নেননি?
সালেহা মনির বলেন, আমার সন্তানদের খুনীদের আটকানো তো দুরে থাক, ময়না তদন্তের হত্যার কারণে নির্নয়ের পরও ৬/৭ মাস পর কবর থেকে তাদের লাশ আবার তুলে আমাদের মনে কষ্ট দেয়া হযেছে। এর পর দুই বছর না যেতেই আজিমপুরের তাদের কবরটিও নিশ্চিন্ন করে দিতে চেয়েছিলো। তাৎক্ষনিক আমি প্রতিবাদ করায় র্যাব তাদের কবরটি স্থায়ী ভাবে পাকা করে দেয়।
তিনি বলেন, মামলার বাদী রুনীর ভাই নওশাদ দুই বছর ধরে না কি মামলার ব্যাপারে কিছুই জানেন না। বাদী যদি তাগিদ না দেয় তবে মামলা গতি পাবে কি করে?
তিনি বলেন, শুনেছি মহাখালীর কোন এক ডাক্তারের খুনীদের সাগর রুনী হত্যা মামলায় জড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। আমার এলাকার একটি ছেলেকেও এই মামলার জড়াতে না পেরে ৬ বছর ধরেই নিখোঁজ করে রাখা হয়েছে। আমি আমার সন্তানের হত্যা নিয়ে আর কত কি দেখবো জানি না।
Prev Post