একের পর এক চলতি ট্রেনে ঘটনা বেড়েই চলছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে বিজয় এক্রপ্রেস ময়মনসিংহ হয়ে চট্টগ্রাম অভিমুখে ফেরার পথে রানিং ইন্সপেক্টর (টিটি) আনিসুল ইসলাম টিকেট চেক করতেছিল, এক পর্যায়ে বিনা টিকেটে কয়েকজন যাত্রী পাওয়া গেলে তাদের টিকেট নাই কেন জানতে চাইলে টিটি’র সাথে টিকেটবিহীন যাত্রীদের সাথে কথাকাটি হয়। এক পর্যায়ে তারা নিজেদের ছাত্র পরিচয় দেয়।
টিটি আনিসুল ইসলাম বলেন, আপনারা ছাত্র ভাল কথা আপনাদের টিকেট কই? টিকেট করেন নাই এটা তো অপরাধ। আপনারা টাকা দিয়ে টিকেট করে করেন তারপর আপনাদের গন্তব্য নেমে জান। তারা রানিং টিকেট করে কুমিল্লা ষ্টেশনে নেমে পড়েন। নামার সময় দেখবে বলে হুমকি দিয়ে জান টিটিকে। ঠিক এর পরের দিন (১৬,০৯.২৪) আগের দিনের ঘটনার জেরে গতকাল সোমবার রাতে বিজয় এক্রপ্রেস ট্রেন কুমিল্লা পৌছলে পূর্বের দিনের টিকেট বিহীন ছাত্র নামধারীরাসহ ২৫/৩০ জন লোক জড়ো হয়ে রাত সারে ১০ দিকে যাত্রীবাহি ট্রেন আটকিয়ে দেন এবং বিভিন্ন ধরণের অশালিন ভাষা ব্যবহার করতে থাকেন। এমন কি কুমিল্লা অতি গুরুত্বপূর্ণ ষ্টেশনের সিগন্যাল রুমে থেকে সবাইকে বের করে দেন। তখন যদি অন্য কোন ট্রেন কুমিল্লা ষ্টেশনে প্রবেশ করতো তা হলে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে যেত,কারণ সিগন্যাল দেয়ার মতো সিগন্যাল রুমে কেউ ছিল না।
অবস্থা বেগতিক দেখে বাংলাদেশ রেলওয়ে চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বলেন, বিজয় এক্রপ্রেসের ট্রেনের চালক ঘটনার কথা (বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তার) জানালে সাথে সাথে তিনি কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের নিকট ফোন করে বিস্তারিত জানালে তিনি তাৎক্ষনিক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী,পুলিশ বাহিনীকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে তাদেও হস্তক্ষেপের ফলে প্রায় রাত ১২টা থেকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।।
গত ১২ সেপ্টেম্বর ঢাকাগামী কক্সবাজার এক্সপ্রেসে ট্রেনেও একই ঘটনা ঘটে। দুপুর সাড়ে ১২টায় কক্সবাজার স্টেশন থেকে এই ট্রেন ছাড়ে। তরুণদের বিশৃঙ্খলার কারণে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে ট্রেন থামাতে বাধ্য হন লোকোমাস্টার (ট্রেনচালক)। অবশ্য ট্রেনে যাত্রী হিসেবে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
টিকিট না কেটেই ট্রেনে করে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামে আসতে চেয়েছিলেন ২০-২৫ জন তরুণ। এতে বাধা দেন রেলের কর্মীরা। শুরু হয় বাগ্বিতন্ডা। একপর্যায়ে রেলকর্মীদের বাধা উপেক্ষা করে তিনজন ছাড়া অন্য সবাই ট্রেনে উঠে পড়েন। এমন অবস্থায় ট্রেন ছেড়ে দিলে আবার ট্রেনের ভেতরে হট্টগোল শুরু করেন তরুণেরা। ট্রেন পেছন দিকে এনে অন্য তিনজনকে নেওয়ার আবদারও করেন তাঁরা। তাঁদের কথা না শুনলে ট্রেনের ভেতরে দায়িত্বরত রেলকর্মীদের লাঞ্ছিত করেন তরুণেরা। পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে প্রধান পরিবহন কর্মকর্তা মো. শহিদূল ইসলাম ঠাকাটাইমসকে বলেন, আজ কুমিল্লা হবে কাল ককসবাজার হবে অন্যদিন আরেক জায়গায় হবে। কিন্ত রেল চলে নির্দিষ্ট একটি সিগন্যালের মাধ্যমে। একের পর এক এমনটি হতে যে কোন সময় রেলে বড় ধরণের দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভবনা রয়েছে। তিনি আরো বলেন,কক্সবাজার স্টেশনে ২০-২৫ জনের একদল তরুণ বিনা টিকিটে কক্সবাজার এক্সপ্রেসে করে চট্টগ্রামে আসতে চান। তাঁরা নিজেদের ছাত্র পরিচয় দেন। টিকিট ছাড়া ট্রেন ভ্রমণ করা সম্ভব না বলা হলেও তা গুরুত্ব দেননি। একপ্রকার জোর করেই ট্রেনে উঠে পড়েন তাঁরা; কিন্তু তিনজন ট্রেনে উঠতে পারেননি।
এই তিনজনকে রেখে ট্রেন ছেড়ে দিলে চলতি পথে ট্রেনের ভেতরে থাকা রেলকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও হাতাহাতি করতে থাকেন বলে জানান রেলের একর্মকর্তা । এমনকি তরুণেরা ট্রেনের ভেতরে জিনিসপত্রও ভাঙচুর করতে থাকেন। ট্রেন থামিয়ে আবার কক্সবাজার স্টেশনে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দেন। এর মধ্যে ট্রেন ছয় কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে। এ অবস্থায় ট্রেন আবার পেছনে নিয়ে গেলে দুর্ঘটনার শঙ্কা আছে। আর গন্তব্যে পৌঁছতেও বিলম্ব হবে। তা ট্রেনের অভ্যন্তরে থাকা সাউন্ডসিস্টেমে ঘোষণা করা হলে যাত্রীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তিনি আরো বলেন,এমন পরিস্থিতির জন্য সরকারের যথাযত কর্তৃপক্ষের একান্ত সহযোগিতা কামনা করেন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।