চবি শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসীদের হামলা, আহত ৫

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। দোকান দখল করার উদ্দেশ্যে এ হামলা চালানো হয়েছে বলে জানা গেছে। সোমবার (২১ অক্টোবর) ভোর ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ভোর ৪ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশন এলাকায় নির্মাণাধীন আপ্যায়ন নামক একটি রেস্টুরেন্টে দখল করার উদ্দেশ্যে ভাঙচুর চালায় স্থানীয় যুবলীগ নেতা হানিফের অনুসারীরা। এ সময় তারা কয়েক রাউন্ড গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে রেলগেট এলাকায় যায়।

এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা যুবলীগ নেতার একটি দোকান ভাঙচুর করে। পরে যুবলীগের নেতাকর্মীরা ছাত্রদের সাথে এলাকাবাসীর সংঘর্ষ হয়েছে উল্লেখ করে গুজব রটিয়ে দেয়। শিক্ষার্থীরা রেলগেট অবস্থান শেষ করে ফিরে আসার সময় স্থানীয়রা পেছন থেকে লাঠিসোঁটা ও দেশিয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। এ হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। আহতদের একজন গুরুতর অবস্থায় বর্তমানে নগরীর পার্কভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী হাবিবুল্লাহ খালেদ জানান, ক্যাম্পাসে যুবলীগের সন্ত্রাসীরা বোমাবাজি করছে শুনে সকালেই আমরা জিরো পয়েন্টে আসি। পুলিশকে খবর দেয়া হলেও রেলগেটে সন্ত্রাসীরা অবস্থান নেওয়ায় তারা আসতে পারছে না বলে শোনা যায়। পরে আমরা শিক্ষার্থীরা প্রক্টর সহকারে রেলগেট এলাকায় যাই এবং অবস্থান নেই। এ সময় যুবলীগের ক্যাডাররা আমাদের দিকে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। পরে আমরা ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়।

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, পুলিশ আমাদের নূন্যতম সহযোগিতা করেনি। এতো বিশাল ঘটনা, অথচ ওসি পুলিশ পাঠিয়েছে ৩ জন। ওই ৩ জন আবার সন্ত্রাসীদের কারণে রেলগেট থেকে আসতে পারেনি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছে খবর আছে হাটহাজারী থানার বর্তমান ওসি এই হানিফের কাছ থেকে মাসিক টাকা খায়। হানিফ ক্যাম্পাসের আশেপাশে লাখ লাখ টাকার অবৈধ ব্যবসা করে। ওই টাকা পুলিশকে খাইয়ে ক্যাম্পাসকে অনিরাপদ করে রেখেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তানভীর হায়দার আরিফ বলেন, স্থানীয় একজনের দোকানে সন্ত্রাসীরা ভাঙচুর চালালে ঘটনার সূত্রপাত হয়। ভোর ৪টায় এখানে প্রচুর ককটেল ফোটানো হয়। এর প্রেক্ষিতে সকালে শিক্ষার্থীরা জড়ো হলে সন্ত্রাসীরা গুজব রটিয়ে দেয় এলাকাবাসীর সাথে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছে।

এর পর সকালে আমরাসহ শিক্ষার্থীরা রেলগেট এলাকায় যাই। সেখানে স্থানীয়দের সাথে কথা হয়েছে। উভয় পক্ষ বসে একটি মিটিং হবে যেখানে এলাকার গণ্যমান্য ৩ জন ব্যক্তি, ছাত্র প্রতিনিধি ও আমরা প্রক্টরিয়াল বডি থাকবো। মিটিং থেকে একটি সমন্বয় কমিটি করা হবে যাতে ভবিষ্যতে এমন সমস্যা হলে দ্রæত সমাধান করা যায়।

সন্ত্রাসী হানিফের ব্যাপারে প্রক্টর বলেন, ওই সন্ত্রাসীর নামে একাধিক জঘন্য মামলা রয়েছে। পুলিশ বলছে তারা সন্ত্রাসীকে (হানিফ) খুঁজছে কিন্তু পাচ্ছে না। অন্যদিকে এলাকাবাসীর মতে সে রাতে নিয়মিত এলাকায় আসে।

প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত যুবলীগ নেতা হানিফ। রেলস্টেশনে রেলওয়ের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে সবগুলো দোকানের ভাড়া নেয় হানিফ। এছাড়া তার ছোটভাই ছাত্রলীগ নেতা মো. ইকবাল পুরো ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় ডিসের লাইন এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ব্যবসা করে। অন্য কাউকে তারা এখানে ব্রডব্যান্ডের ব্যবসাও করতে দেয় না। নিম্নমানের ইন্টারনেট দিয়ে দীর্ঘদিন এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিম্নমানের ইন্টারনেটের বিষয়ে অভিযোগ জানালে তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার ও হুমকির অভিযোগও আছে ইকবালের বিদ্ধে।

এর আগে, গত ৫ আগস্ট রাতে রেলক্রসিং এলাকায় শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায় যুবলীগ নেতা হানিফ ও তার অনুসারীরা। সে সময় দর্শন বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হকের গাড়ীতেও হামলা করে তারা। তাদের হামলা তখন ৩ জন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়।