মাইলেজ জটিলতা

ট্রেন চালক-গার্ডদের মধ্যে অসন্তোষ, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফদের মাইলেজ জটিলতা নিরসন না হওয়ায় আবারও ট্রেন চালক ও গার্ডদের মধ্যে অসন্তোষ দীর্ঘ দিনের। গত বেশ কয়েকদিন বছর ধরে রানিং স্টাফরা (ট্রেন চালক, গার্ড, টিটিই) তাদের মাইলেজ নিয়ে আন্দোলন করছে। গত ৪ দিন ধরে ট্রেন চালকরা আন্ডার রেস্টে ট্রেন চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর হেডকোয়ার্টারে ১২ ঘণ্টা এবং আউট স্টেশনে ৮ ঘণ্টা রেস্ট ছাড়া ট্রেন চালাচ্ছেন না। এর ফলে নাজিরহাটগামী দুই জোড়া ট্রেনের সিডিউল বাতিল করা হয়েছে। পূর্বাঞ্চলের প্রতিটি আন্তঃনগর ট্রেন আধঘণ্টা থেকে ১ ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্বে চলাচল করছে। এর ফলে যাত্রীদের ভোগান্তি গত অনেকদিন ধরে।

আন্ঃনগর প্রতিটি ট্রেনের বিলম্ব বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম রেল স্টেশনের ম্যানেজার মো. মনিরুজ্জামান জানান, ট্রেন চালক ও গার্ডরা তাদের মাইলেজ নিয়ে আন্দোলন করছে। এই কারণে প্রতিটি ট্রেন বিলম্বে আসছে। সারাদেশ থেকে চট্টগ্রামে ট্রেন বিলম্বে ঢুকার কারণে বিলম্ব যাচ্ছে। যাত্রীদের কাছে জবাবদিহি করতে হচ্ছে। প্রতিটি ট্রেন ৩০ মিনিট থেকে ৪০ মিনিট দেরি হচ্ছে। চট্টগ্রামের নাজিরহাটগামী দুই জোড়া ট্রেনের সিডিউল বাতিল করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান বলেন, বারবার আশ্বাস দেয়ার পরও গত তিন বছরে রেলের রানিং স্টাফদের (ট্রেন চালক, গার্ড, টিটিই) মাইলেজ জটিলতার বিষয়টি সুরাহা হয়নি। সেই কারণে আমাদের ট্রেন চালক, গার্ড, টিটিইরা এখন আন্ডার রেস্টে ডিউটি করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। তিনি বলেন, রেলের নিয়ম অনুযায়ী– আমরা ট্রেন চালকরা ট্রেন চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর হেডকোয়ার্টারে ১২ ঘণ্টা এবং আউট স্টেশনে ৮ ঘণ্টা রেস্ট করার সুযোগ পাই। কিন্তু এতদিন আমরা রেলের স্বার্থে ১২ ঘণ্টা এবং ৮ ঘণ্টা রেস্ট কখনো করিনি। আমরা (ট্রেন চালক, গার্ড ও টিটিই) রেস্ট না নিয়ে ট্রেন চালাতাম। এই অতিরিক্ত ডিউটির জন্য আমরা ব্রিটিশ আমল থেকে বাড়তি বোনাস পেয়ে আসছি। কিন্তু হঠাৎ করে গত তিন বছর আগে সেটা বন্ধ করে দেয়ায় রানিং স্টাফদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। গত রোববার থেকে আবার মাইলেজ নিয়ে ট্রেন চালক এবং গার্ডরা কথা বলা শুরু করেছে। আমাদের চালকরা আন্ডার রেস্টে ডিউটি করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এর ফলে সারাদেশে ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। সব ট্রেন গন্তব্যে বিলম্বে পৌঁছছে। সব লোকাল ট্রেন বন্ধ হয়ে গেছে। মালবাহী ট্রেন চলাচল অর্ধেক কমে গেছে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মজিবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, রেল সৃষ্টির শুরু থেকে রেলওয়ে রানিং স্টাফগণ পার্ট অব পে রানিং এলাউন্স পেয়ে আসছেন। ২০২১ সালে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক চিঠিতে এই সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে রানিং স্টাফদের মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দেয়। ট্রেন চালক ও গার্ডরা তাদের মাইলেজের দাবিতে ২০২২ সালে সারাদেশে একযোগে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়। ওইদিন রেল মন্ত্রী, রেল সচিব ও রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ কমলাপুর রেল স্টেশনে গিয়ে ট্রেন চালক ও গার্ডদের তাদের রানিং এলাউন্স পূর্বের মতো বহাল থাকবে বলে ঘোষণা দিলেও আজও সেই দাবি মানা হয়নি বলে অভিযোগ করেন মুজিবুর রহমান ভূঁইয়া।

বাংলাধেদশ জাতীয়তাবাদী রেলওয়ে শ্রমিক দলের কেন্দ্রিয় সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এস আর মন্জু সোনালী চট্টগ্রামকে বলেন, একটা যৌক্তিক দাবীকে বিগত স্বৈরচার সরকারের আমলে রেলকে অকার্যকর প্রতিষ্টানে পরিনত করার জন্য বাতিল করে দেন। ব্রিটিশ আমল থেকে যে রেল কোডে লের পরিচালিত হয়ে আসছে সে রেল কোডেও স্পষ্ট মাইলেজ উল্লেখ রয়েছে। বিগত রেজিমের সচিব কারো সাথে আলাপ আালোচনা না করে রেষ্ট প্রথা চালু করে রানিং স্টাফদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে। তিনি বলেন,এটা যৌক্তিক দাবী তাই যতদ্রæত স¤ভব আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যায় ততই মঙ্গল বলে মন্তব্য করেন।