চেমন বেগম (৭০) লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের সাতগড় গ্রামের মেয়ে তার পিতার নাম মৃত মুখলেছুর রহমান এবং দুই ভাইয়ের নাম মৃত এজহার মিয়া ও গুরা মিয়া। স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বে চট্টগ্রামে কর্মরত পাকিস্তানের পাঠান বংশীয় নওয়াব গুলের সাথে তার বিবাহ হয়। স্বাধীনতার পূর্বেই তিনি স্বামীর সাথে পাকিস্তান চলে যান। ফলে দীর্ঘ অর্ধ শতাব্দী ধরে আধুনগরে অবস্থানরত পরিবার-পরিজনের সাথে কোন যোগাযোগ রক্ষা করা তার জন্য সম্ভব হয়নি।
পাকিস্তানের পেশোয়ারে মর্দান জেলার কাটলাং শহরের মিয়া খান গ্রামে বসবাসরত চেমন বেগমের চারজন ছেলে সন্তানের একজন হলেন দুবাই প্রবাসী মুহাম্মদ আলী খান। তিনি গত ৪ঠা মে ইন্টারনেট থেকে মোবাইল নাম্বার বের করে আধুনগর ইসলামিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ জনাব মাওলানা খালেদ জমীলকে কল করে এবং তার মা চেমন বেগমের পিতা ও ভাইদের নাম উল্লেখ করে তার বংশ ও পরিবার-পরিজনের সন্ধান লাভে সহযোগিতার অনুরোধ করে। সে আরো জানায় তার মা জীবন সায়াহ্নে এসে এখন হারানো পরিবার- পরিজনের সন্ধান লাভের জন্য অস্থির হয়ে উঠেছেন।
অধ্যক্ষ মাওলানা খালেদ জমীল গত ৫ মে তার ফেসবুক একাউন্টে চেমন বেগমের পরিবারের সন্ধানে ‘শেখড়ের সন্ধানে” শিরোনামে একটি পোস্ট দিলে এটি খুব অল্প সময়ের মধ্যে ব্যাপক শেয়ার হয় এবং ৫/৬ ঘন্টার মধ্যেই পোস্টের কমেন্টে দুই জন দাবি করেন তারাই চেমন বেগমের বংশধর।
তাদের একজন হচ্ছেন সৌদি প্রবাসী মোহাম্মদ শাহজাহান, পিতা- জনাব আব্দুল আজীজ পীং কালা মিয়া। কালা মিয়া ছিলেন চেমন বেগমের চাচাতো/ জেঠাতো ভাই। আরেকজন হচ্ছে চেমন বেগমের বড় ভাই এজহার মিয়ার ওমান প্রবাসী ছেলে মোহাম্মদ পেঠান।
অধ্যক্ষ সাহেব ওরা দু’জনের সাথে বিশেষত মোঃ শাহজাহানের পিতা জনাব আব্দুল আজিজের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হন – ওরাই হলেন চেমন বেগমের পরিবার ও বংশের লোক। তিনি চেমন বেগমের ছেলে মুহাম্মদ আলীকে দুই জনের মোবাইল দিলে তাদের সাথে তার ও তার মা চেমন বেগমের আবেগঘন যোগাযোগ ও কথোপকথন হয়।
চেমন বেগমের ভাতিজা তথা তার ভাই মৃত এজহার মিয়ার ছেলে মোঃ পেঠান জানায় যে, দীর্ঘ দিন পর ফুফির সাথে ইমুতে তার এবং স্বীয় বোনের সাথে তার চাচা গুরা মিয়ার দেখা ও কথা হয়। তাদের দেখে চেমন বেগম অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠেন। তবে তিনি বাংলা ভাষা ভুলে গেছেন এবং উর্দুতে তাদের সাথে কথা বলেছেন।
এ প্রসঙ্গে চুনতি ইউনিয়ন পরিষদের ০৮ ওয়ার্ডের স্থানীয় মেম্বার জনাব তৈয়ব উল্লাহ বলেন : চেমন বেগমের পরিবার তার ঘনিষ্ঠ ও পরিচিত। চেমন বেগমকে তিনি না দেখলেও তার সম্পর্কে জানতেন। অর্ধ শতাব্দী পর পাকিস্তানে অবস্থানরত চেমন বেগমের সাথে তার বংশধরদের অনলাইনে যোগাযোগ হওয়ার কথা তিনি জেনেছেন এবং খুবই খুশি হয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ মাওলানা খালেদ জমীল বলেন : দীর্ঘ অর্ধ শতাব্দীর পর পাকিস্তানের চেমন বেগমের সাথে বাংলাদেশে অবস্থানরত তার হারানো পরিবারের সন্ধান লাভ ও অনলাইনে যোগাযোগ স্থাপন একটি আশ্চর্য জনক ঘটনা বটে। মূলত এটি সম্ভব হয়েছে প্রথমত মহান আল্লাহর অপার কৃপায়, দ্বিতীয়ত আধুনিক উন্নত অনলাইন যোগাযোগ প্রযুক্তির কল্যাণে। জীবন সায়াহ্নে উপনীত চেমন বেগম বাংলাদেশে আসতে না পারলেও আশা করি এই যোগাযোগ দূই দেশে অবস্থানরত তার ও ভাইদের উত্তরসূরীদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তুলবে।