চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উনয়ন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ প্রবাহ। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে দেশের মোট বাণিজ্যের ৯২% এবং কন্টেইনারজাত পণ্যের ৯৮% পরিবাহিত হয়ে থাকে। দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের সিংহভাগই সামাল দিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। দেশের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য চাহিদা, আঞ্চলিক যোগাযোগের ভৌগলিক অবস্থানগত গুরুত্ব এবং বন্দর কেন্দ্রিক উনয়ন চিন্তা চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব বাড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। লক্ষ্য এখন আঞ্চলিক পণ্য পরিবহনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হওয়া।
মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) দুপুর ১২টায় বন্দর সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রামে কর্মরত ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, সরকার চট্টগ্রাম বন্দরের ধারাবাহিক উন্নয়নে তৎপর। ১০ মিটার ড্রাফট ও ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভেড়ানো, ইউরোপের সাথে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু, মাতারবাডী গভীর সমুদ্র বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ, বহির্নোঙরের আওতা বৃদ্ধি, ভিটিএমআইএস, ডিজিটালাইজেশন, কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের অত্যাধুনিক কী সাইড গ্যান্ট্রি ক্রেন সংযোজনের মতো উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়েছে গত এক যুগে।
তিনি বলেন, বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থানকাল বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্দেশক। বর্তমানে কন্টেইনার জাহাজ বহির্নোঙরে আসার এক েেক দুই দিনের মধ্যে জেটিতে ভিড়ছে, ক্ষেত্রবিশেষে অন-এ্যারাইভেল বারিং প্রদান করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩০ লাখ ৭ হাজার ৩৪৪ টিইইউএস। জেনারেল কার্গো ওঠানামা হয়েছে ১১ কোটি ৮২ লাখ ৯৬ হাজার ৭৪৩ মেঃটন। জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৪২৫৩ টি। ক্রমবর্ধমান হ্যান্ডলিং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন ও এর বাস্তবায়ন শুরু করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দরের কার্যক্রমের সাথে সহায়ক অন্যান্য সংস্থা/এজেন্সী যেমন শুল্ক বিভাগ, ব্যাংক, শিপিং এজেন্টগণ আন্তঃসমন্বয়ের মাধ্যমে ২৪দ্ধ৭ কার্যক্রম সম্পাদন করছে। তাছাড়া, চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব আদায়ে গত বছরের তুলনায় প্রায় ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের পেছনে রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের নিরবচ্ছিন্ন কর্মতৎপরতা ও দক্ষতা।
সরকারের নানামুখী উনয়ন প্রকল্পের উল্লেখ করে তিনি বলেন, এজন্য আমদানিকৃত পণ্য দ্রুততর খালাস ও রপ্তানিযোগ্য পণ্য দ্রুত জাহাজীকরণে ভবিষ্যৎ চাহিদাকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ স্বল্প এবং মধ্যমেয়াদী কার্গো ও কন্টেইনার হ্যান্ডলিং সুবিধাদি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে নতুন নতুন টার্মিনাল নির্মাণ করছে। ইতোমধ্যে ৫৮৪ মিটার দীর্ঘ জোটসহ পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) নির্মাণ কাজ শেষ হয়ৈছে। বর্তমান ও ভবিষ্যতে কন্টেইনার, কার্গো ও জাহাজ হ্যান্ডলিং নিরবচ্ছিন্ন রাখার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন হেভি লিফ্ট জেটি, বে-টার্মিনাল এবং কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলায় ” মাতারবাড়ী পোর্ট ডেভেলপমেন্ট” শীর্ষক প্রকল্পসমূহের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।
বে-টার্মিনাল এবং কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলায় “মাতারবাড়ী পোর্ট ডেভেলপমেন্ট” শীর্ষক প্রকল্পসমূহের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান সক্ষমতা বহুগুনে বৃদ্ধি পাবে। এসময় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।