কক্সবাজার : বহুল প্রতীক্ষিত কক্সবাজার-ঢাকা রুটে রেল চলাচল অবশেষে শুরু হয়েছে। শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১২টায় হাজারো যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে শুরু হয় ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ট্রেনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা। স্বপ্নের প্রথম যাত্রা শুরু করতে আগেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছিল। গত একসপ্তাহ আগেই যাত্রার টানা নয়দিনের টিকেট আগাম বিক্রি হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার আতিকুর রহমান।
তিনি জানান, বাণিজ্যিক যাত্রার প্রথম দিন শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ঢাকার উদ্দেশে কক্সবাজার আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে যায়। এর আগে সকাল হতে যাত্রীরা স্টেশনে আসা শুরু করেন। ১১টা হতে টিকেট চেক করে যাত্রীদের বগিতে তোলা শুরু হয়। এসময় ফুল ও চকলেট দিয়ে অভিবাদন জানানো হয় যাত্রীদের।
তিনি আরো জানান, কক্সবাজার এক্সপ্রেসের গতিসীমা ১২০ কিলোমিটার নির্ধারণ করা আছে। যাত্রা পথে এটি চট্টগ্রাম ও ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্টেশনে কেবল দাঁড়ানোর কথা রয়েছে। এভাবে গিয়ে রাত নয়টার দিকে ট্রেনটি ঢাকায় পৌঁছানোর কথা। আর ফিরতি ট্রেন ঢাকার কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে রাত সাড়ে ১০টায় কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে।
সূত্র মতে, কয়েক দফা পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলের সফল কার্যক্রম শেষে গত ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার রেল সংযোগ উদ্বোধন করেন। এ সময় ডিসেম্বর থেকে দুটি ট্রেন চালুর নির্দেশনা দেন তিনি।
রেলওয়ের কক্সবাজারে বুকিং অফিসার নেজাম উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, শুক্রবার থেকে কক্সবাজার রুটে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয়ে। দরিয়াপাড়ের এ ট্রেন নিয়ে মানুষের ব্যাপক আগ্রহ। আগামী ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা থেকে কক্সবাজার ও কক্সবাজার থেকে ঢাকা রুটের সকল টিকিট বিক্রি শেষ।
কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার ফরহাদ বিন চৌধুরী বলেন, বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচলের সব প্রস্তুতি আগেই সম্পন্ন করা হয়েছিল। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টায় কক্সবাজার স্টেশন থেকে ১০২০ যাত্রী নিয়ে প্রথম ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। রাত সাড়ে ১০টায় সমসংখ্যক যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে আরেকটি ট্রেন কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে।
তিনি জানান, এই রুটে আপাতত দুটি ট্রেন চলাচল করবে। কক্সবাজার থেকে ট্রেন ছাড়বে দুপুর সাড়ে ১২টায়। চট্টগ্রাম হয়ে এটি ঢাকায় পৌঁছাবে রাত সোয়া নয়টায়। অন্যদিকে ঢাকা থেকে ট্রেন ছাড়বে রাত সাড়ে ১০টায়। এটি কক্সবাজার পৌঁছাবে পরদিন সকাল সোয়া সাতটায়।
তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের মানবসম্পদ কর্মকতা মাহবুবুল ইসলাম বলেন, বিশ্বের দীর্ঘতম পর্যটন নগরী কক্সবাজার হতে ঢাকা রুটে ট্রেন চলাচলকে কেন্দ্র করে পর্যটকসহ জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ ও উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ করছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের লোকজন যারা কর্মের কারণে কক্সবাজার অবস্থান করেন, বাস যাত্রা যারা সইতে পারেন না তাদের জন্য রেল যোগাযোগ একটি আশির্বাদ হয়ে এসেছে। এখন পর্যটকের পাশাপাশি কাজের আসায় চট্টগ্রামের বাইরের লোকজন আরো বেশী কক্সবাজারে আসবেন। এতে পর্যটন শিল্পের প্রসারের পাশাপাশি তৈরি হয়েছে নতুন সম্ভাবনাও।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, যাত্রী চাহিদার কারণে নতুন কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনে বগির সংখ্যা দুটি বাড়ি করা হয়েছে ২৩টি। এসব বগিত সাচ্ছন্দ্যে হাজারের অধিক যাত্রী আসা-যাওয়া করতে পারবেন। ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত শোভন চেয়ারের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৯৫ টাকা। এসি চেয়ারের ভাড়া ১ হাজার ৩২৫ টাকা, এসি সিটের ভাড়া ১ হাজার ৫৯০ টাকা ও এসি বার্থের ভাড়া (ঘুমিয়ে যাওয়ার আসন) ২ হাজার ৩৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত শোভন চেয়ারের ভাড়া ২০৫ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণির ৩৮৬ টাকা, এসি সিটের ৪৬৬ ও এসি বার্থের ভাড়া ৬৯৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়।