চিত্রনায়িকা পরীমণির বিরুদ্ধে রাজধানীর বনানী থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা মামলা বিচারিক আদালতে চলবে বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ে মদের বিষয়টি বাদ দিয়ে এলএসডি-আইসের অভিযোগে মামলা চালানোর কথা বলা হয়েছে। এর ফলে তার বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতে মাদক মামলা চলবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
পরীমণি বিরুদ্ধে মাদক মামলার কার্যক্রম বাতিল প্রশ্নে জারি করা রুলের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি আতাবুল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না, শাহ মনজুরুল হক ও মো. শাহীনুজ্জামান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পি।
এর আগে, গত ২২ ফেব্রুয়ারি শুনানি শেষে পরীমণির বিরুদ্ধে রাজধানীর বনানী থানার মাদক মামলা চলবে কি না, সে বিষয়ে রায়ের জন্য আজকের দিন (২২ ফেব্রুয়ারি) ধার্য করেন আদালত।
২০২৩ সালের ৯ জানুয়ারি পরীমণির বিরুদ্ধে দায়ের করা মাদক মামলা বাতিল প্রশ্নে জারি করা রুল ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। সে পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম ছয় মাস স্থগিত থাকবে বলে নির্দেশ দেন বিচারপতি মো. নুরুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ।
এর আগে, ২০২১ সালের ৪ আগস্ট বিকেলে বনানীর ১২ নম্বর রোডের পরীমণির বাসায় অভিযান পরিচালনা করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এ সময় ওই বাসা থেকে বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ, মদের বোতলসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়। এরপর ৫ আগস্ট চার দিন এবং ১০ আগস্ট দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
আর ১৩ আগস্ট রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর আবারও ১৯ আগস্ট একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। পরে ৩১ আগস্ট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ তার জামিন মঞ্জুর করেন। এরপর গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগার থেকে মুক্তি পান পরীমণি।
একই বছরের ৪ অক্টোবর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় পরীমণিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক কাজী মোস্তফা কামাল। মামলার অপর দুই আসামি হলেন- পরীমণির ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম দিপু ও পরীমণির বড় খালু কবীর হাওলাদার। আসামিরা সবাই জামিনে মুক্ত আছেন।
পরে ১২ অক্টোবর মামলাটি ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) আদালত থেকে মহানগর দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর করা হয়। এরপর পরীমণিসহ তি জনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় দায়ের করা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি অভিযোগ গঠন করে আদালত।
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর বিচারক নজরুল ইসলামের আদালত এই আদেশ দেন। পরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ ও মামলা বাতিল চেয়ে ২০২২ সালের ৩০ জানুয়ারি আবেদন করেন পরীমণি। আবেদনের শুনানি শেষে ২০২২ সালের ১ মার্চ এই মামলার কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে পরীমণির বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. সেলিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এরপর হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এবং ২০২২ সালের ৮ মার্চ পরীমণির বিরুদ্ধে দায়ের করা মাদক মামলার কার্যক্রম নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ ছয় সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেন চেম্বার জজ আদালত।
পরবর্তীতে শুনানির ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের ৯ জানুয়ারি পরীমণির বিরুদ্ধে দায়ের করা মাদক মামলা বাতিল প্রশ্নে জারি করা রুল ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। সে পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম ছয় মাস স্থগিত থাকবে বলে নির্দেশ দেন বিচারপতি মো. নুরুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ।
এদিকে পরীমণিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রাজধানীর বনানী থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ পিছিয়ে ৩১ মার্চ দিন ধার্য করেছেন আদালত। গত ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের আদালত এ দিন ধার্য করেন।
আদালতে পরীমণির আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভী এদিন আদালতে হাজিরা দেন। তিনি হাইকোর্টে এ মামলার শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহণ পেছানোর আবেদন করেন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ৩১ মার্চ দিন ধার্য করেন।